Image description

রাজস্ব আহরণ না বাড়লেও গোষ্ঠীতন্ত্রের স্বার্থরক্ষায় প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়িয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও বাজেট দেয়া হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার।

রাজস্ব আহরণ না বাড়লেও গোষ্ঠীতন্ত্রের স্বার্থরক্ষায় প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়িয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও বাজেট দেয়া হয়েছিল প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার। এ বাজেট কার্যকরের এক মাসের মাথায় ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার সরকার। ক্ষমতা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণকারী এ সরকার গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে বলে প্রত্যাশা ছিল সবার। যদিও এরই মধ্যে সে প্রত্যাশায় ছেদ ঘটেছে। বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই নতুন করে গতকাল প্রায় একশ পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

যেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি করা হচ্ছে তার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় সর্বসাধারণের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না এবং মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করছে সংস্থাটি। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ, এলপিজি, রেস্তোরাঁর খাবার ও মোবাইল ফোন সেবার ওপরও বাড়তি করারোপ করা হয়েছে, যা মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্য ও সেবা। ফলে এগুলোর কর বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ব্যয় বাড়বে।

রাষ্ট্রপতি গতকাল রাতেই মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছেন। এ দুটি অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। এর ফলে বাড়তি করের বিষয়টিও এরই মধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে।

আমদানি পর্যায়ে ৩২টি পণ্যের ওপর বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা দুই ধরনের বাদামের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। খোসা ছাড়া বা খোসাসহ তাজা বা শুকনা সুপারির ওপর শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাজা বা শুকনো আম, কমলালেবু, আঙুর, লেবু, লেবু জাতীয় ফল, তাজা তরমুজ ও পেঁপে, তাজা আপেল ও নাশপাতি, তাজা অ্যাপ্রিকট, চেরি ও পিচ, অন্যান্য তাজা ফল, ফলের রস এবং সবজির রসের ওপর শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

অপ্রক্রিয়াজাত তামাক ও তামাকের উচ্ছিষ্ট আমদানিতে শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান এবং ফ্লাইং ক্লাবের মাধ্যমে আমদানীকৃত পেইন্টস ও বার্নিশ ও লেকারের ওপর আগে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপিত হতো। এখন সেটি বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। সাবান, সাবান হিসেবে ব্যবহৃত সারফেস অ্যাকটিভ সামগ্রী ও সমজাতীয় পণ্যে শুল্ক ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। ডিটারজেন্ট আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে এখন ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের মধ্যে পাঁচ ধরনের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ফলের রস ও ড্রিংকসের ওপর শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, ফ্লেভার ডিংকস ও ইলেকট্রোলাইটের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ ছিল না। নতুন করে সেখানে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তামাকযুক্ত সিগারেট শুল্ক ৬৬ থেকে ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭ করা হয়েছে। পেইন্টসের শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য চার ধরনের সেবার শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এর মধ্যে আবাসন, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাদ্য বা পানীয় সরবরাহকালে পরিবেশিত মদজাতীয় পানীয় বা ফ্লোর শো আয়োজনের ক্ষেত্রে বিলের ওপর শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আইএসপি ইন্টারনেটের দেয়া সেবার ওপর আগে কোনো শুল্ক ছিল না। এখন সেখানে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

মূসক আরোপযোগ্য অন্তত ৩২ ধরনের পণ্যের মূসক বাড়ানো হয়েছে। এসব পণ্যের মূসক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন অধ্যাদেশে এসব পণ্যে ১০ শতাংশ মূসক বাড়ানো হয়েছে। এ পণ্যগুলো হলো পটেটো ফ্লেক্স, মেশিনে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট, কেক, আচার (বোতলজাত ও প্যাকেটজাত), চাটনি, টমেটো পেস্ট, টমেটো ক্যাচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা, কলা, তেঁতুল পেস্ট, ট্রান্সফরমার অয়েল (পোড়া ও ব্যবহারযোগ্য), লুব্রিক্যান্ট অয়েল, বিআরটির লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, কঠিন শিলা, ফেরো সিলিকন অ্যালয়, সিআর কয়েল, জিআই ওয়্যার, বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রান্সফরমার (৫ থেকে ২ হাজার কেভি পর্যন্ত), চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম, মেটাল ফ্রেম, নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ম্যাট্রেস।

মূসক আরোপযোগ্য সেবার মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তিন তারকা আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মদের বার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়েল ও সানগ্লাসের (প্লাস্টিক বা মেটাল ফ্রেমযুক্ত) মূসক সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এলপিজির ক্ষেত্রে মূসকের হার ৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। মূসক আরোপযোগ্য সেবার যেমন নন এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নিজস্ব ব্যান্ড সংবলিত তৈরি পোশাক, তৈরি পোশাক বিপণন মূসক সাড়ে ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ইলেকট্রিক পোলের (স্টিল প্লেট দিয়ে উৎপাদিত) ক্ষেত্রে মূসক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

মূসক আরোপযোগ্য ১৪টি সেবার মূসক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এগুলো হলো মোটরগাড়ির গ্যারেজ, ডকইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শক, পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলার আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় যোগদানকারী, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবনের মেঝে রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা এবং সামাজিক খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব।

ব্যবসায়ী পর্যায়ে তিন ধরনের মূসকের মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে হার বাড়িয়েছে সরকার এবং একটির ক্ষেত্রে কমিয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসকের হার ৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ। ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ের মূসকের হার ২ দশমিক ৪ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এলপিজির স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ের আগে মূসকের হার ২ শতাংশ ছিল, এখন সেটি শূন্যে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রাজস্ব ঘাটতি মেটানোর উদ্দেশ্যে এবং ধীরে ধীরে একক ভ্যাট হার প্রবর্তনের লক্ষ্যে ভ্যাট আইন সংশোধন করা হয়েছে। হিসাবভিত্তিক ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করে ইনপুট ভ্যাট ক্রেডিট গ্রহণ করলে প্রদেয় ভ্যাটের হার বিদ্যমান হারের চেয়ে অনেক কমে যাবে।’

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার। বাজেটে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল ঘাটতি বাজেট। এ ঘাটতি মেটানোর কথা ব্যাংকসহ দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরের রাজস্ব আহরণের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি এনবিআর। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সংস্থাটি ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে। যদিও এ সময়ে সংস্থাটির আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে গড়ে প্রতি মাসে আহরণ হয়েছে ২৫ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ সময়ে রাজস্ব আহরণ কমেছে ১ শতাংশ। বাংলাদেশের অনুরোধে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), যা সামনের বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদনসাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে সরকারকে। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে গড়ে আহরণ করতে হবে ৩৭ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। যেখানে এর আগে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল সংস্থাটি।

রাজস্ব আহরণ না বাড়লেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে সরকারের ব্যয়। এতে বাড়ছে সরকারের ঋণনির্ভরতাও। বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধে। এমনকি চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ রাজস্ব আয়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে আইএমএফও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফের পক্ষ থেকে এর আগের দুই অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সেটি পূরণ করতে পারেনি সরকার। এ অবস্থায় চলমান ঋণ কর্মসূচির অধীনে প্রতি বছরই বাংলাদেশের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে আইএমএফ। চলতি অর্থবছরের জন্য সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সংস্থাটি। যদিও দেশের বিদ্যমান প্রতিকূল অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

আবার আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকারের নিজস্ব বাস্তবতায় অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের স্বাধীনতাও খর্ব হচ্ছে বলেও অভিমত তাদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরীর ভাষ্যমতে, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক বা এডিবির মতো সংস্থার কাছ থেকে অর্থ নেয়া হলে এর বিপরীতে তারা কিছু শর্ত দেয়। এ শর্ত পূরণ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা খর্ব হয়। ভ্যাটের হার বাড়ানোর উদ্যোগটিও আইএমএফের শর্ত মেনে নেয়া হয়েছে। এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে শর্তের বেড়াজালে আটকা পড়ে অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়নের সময় মানবকল্যাণে দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হয় না।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরা‌ষ্ট্র গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্র সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ ১২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইডলাইনে ৪০টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। এসব বৈঠকে তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সার্বিক সংস্কারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অকুণ্ঠ সমর্থনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছেন।যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বিদেশী ঋণ সহায়তা এসেছে দেড় বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের পক্ষ থেকে মোটাদাগে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে সেগুলো বন্ধ করা গেলেও কিন্তু রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতি জনকল্যাণমুখী হয়ে ওঠার প্রত্যাশা তীব্রতর হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনেকটাই গণবিরোধী। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটি পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। কিন্তু এখনো আগের সরকারের প্রণীত বাজেটই বলবৎ রয়ে গেছে। একইভাবে বহাল রয়েছে বিগত সরকারের গৃহীত রাজস্ব ও মুদ্রানীতিও। দেশের অর্থনীতিও চলছে এখন আইএমএফের দর্শনে। সম্প্রতি বাজেট সংশোধনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে এর আকার কমবে সামান্যই। বরং সামনের অর্থবছরে তা আরো বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ভোক্তাদের অবস্থা হলো—নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। শুধু দরিদ্র মানুষের কষ্ট হচ্ছে কিনা, আলোচনাটি এ রকম অবস্থায়ও নেই। যারা মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষ তাদের জন্যও এটা খুবই চাপের হয়ে গেছে। এ রকম সময়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত আমি মনে করি না যে ঠিক হয়েছে। এটা সম্পূর্ণভাবেই আইএমএফের যে শর্ত আছে, সেই শর্তের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হলো। এটাতে হয়তো অনেকেই দ্বিমত করবে না যে ভ্যাটের হারকে একক হার করার বিষয়টি আমাদের মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য ছিল। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির মধ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত। বাংলাদেশে কর ফাঁকির পরিমাণ অনেক বেশি, সামর্থ্যবান মানুষের অনেকেই সঠিকভাবে কর দেন না। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে অনেক ধরনের ছাড় রয়েছে, সেগুলোকে হয়তো যৌক্তিক করা যেত। কর ফাঁকি রোধ করা সরকারের ১ নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল। এর পরই অগ্রাধিকারে থাকা উচিত প্রত্যক্ষ করহারের যৌক্তিকীকরণ। সেদিকে না গিয়ে মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী যে কর আহরণ করা যাচ্ছে না, সেটার অংশ হিসেবেই এমন সিদ্ধান্ত। এটা সাধারণ মানুষকে চাপের মধ্যে ফেলবে এবং তাদের অসহিষ্ণুতাকেও বৃদ্ধি করবে। সার্বিকভাবে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি মানুষের সমর্থনের ওপরও এ সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’