
অবরুদ্ধ গাজা শহরের একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা ‘হলি ফ্যামিলি চার্চে’ ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক খ্রিস্টান নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি ফোনকল ও তীব্র অসন্তোষের পর এই বিবৃতি আসে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘গাজায় হলি ফ্যামিলি গির্জায় ভুলবশত ছোড়া গোলার আঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েল গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে। প্রতিটি নিরীহ প্রাণের মৃত্যুই একটি ট্র্যাজেডি। নিহতদের পরিবার ও বিশ্বাসীদের শোকে ইসরায়েল শামিল।’
এই বিবৃতি নেতানিয়াহুর নামেই নয়, বরং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এসেছে। এতে পোপ লিও চতুর্দশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়। পোপ শোক প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি গাজার এই ঘটনার পর যুদ্ধবিরতির আশা ব্যক্ত করেন, যদিও তিনি ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করেননি। শুক্রবার (১৮ জুলাই) সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব বলা হয়।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা জানতে পেরে নেতানিয়াহুকে ফোন করেন এবং কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। লেভিট বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল না।' ফোনালাপে নেতানিয়াহু সম্মত হন যে এটি ভুলবশত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী বিবৃতি দেবেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজা শহরে সামরিক অভিযান চলাকালে একটি ট্যাংক শেলের টুকরো ভুল করে গির্জাটিতে গিয়ে লাগে। তারা বলছে, ‘এই ঘটনার একটি প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, অভিযানকালে ছোড়া শেলের খণ্ডিত অংশ গির্জায় আঘাত হানে। ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃত এবং এর তদন্ত চলছে।'
আইডিএফ আরও জানায়, ‘আমরা কেবলমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করি এবং বেসামরিক নাগরিক বা ধর্মীয় স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাই। গির্জা বা ধর্মীয় স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয় না, এবং অনিচ্ছাকৃত ক্ষয়ক্ষতির জন্য আমরা দুঃখিত।’
এই ঘটনায় নিহত হন সাদ সালামেহ এবং ফুমিয়া আয়াদ। তাদের স্মরণে গাজার সেন্ট পারফিরিয়াস গির্জায় বিশপ আলেক্সিওসের নেতৃত্বে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়। ছবিতে দেখা গেছে, গির্জার প্রাচীরের একটি অংশ ভেঙে গেছে এবং জানালাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছিল, 'গির্জার ক্ষয়ক্ষতি ও বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। ইসরায়েল কখনও ধর্মীয় স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করে না এবং নিরীহ নাগরিকদের ক্ষতিতে আমরা অনুতপ্ত।’
এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে শোক ও উদ্বেগের ছায়া নেমে এসেছে। যুদ্ধবিরতি এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।