
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে শান্তিচুক্তিতে অনীহা দেখানোয় প্রকাশ্যে বিরক্তি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, পুতিন “ওয়াশিংটনের দিকে বাজে কথা ছুঁড়ে দিচ্ছেন।”সোমবার ওয়াশিংটনে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে ন্যাটোর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন।
“আমরা আজ এমন একটি চুক্তি করেছি, যার আওতায় আমরা (ইউক্রেনে) অস্ত্র পাঠাব এবং ন্যাটো তার মূল্য পরিশোধ করবে,” হোয়াইট হাউজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন ট্রাম্প।
তিনি জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানে পুতিনের অনীহায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করতে প্রস্তুত, যা কার্যকর হতে পারে আগামী ৫০ দিনের মধ্যেই।
“আমরা রাশিয়ার ওপর খুবই অসন্তুষ্ট এবং আমরা অত্যন্ত কঠোর শুল্ক আরোপ করব প্রায় ১০০ শতাংশ হারে,” বলেন ট্রাম্প।“আমরা এই যুদ্ধে ২৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছি এবং আমরা চাই এটি শেষ হোক। আমি পুতিনকে নিয়ে হতাশ, কারণ আমি ভেবেছিলাম দুই মাস আগেই একটি চুক্তি হবে,” তিনি যোগ করেন।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে পুতিনের সমালোচনা করে বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে খুব হতাশ। আমি ভাবতাম, তিনি যা বলেন তা-ই করেন। তিনি খুব সুন্দরভাবে কথা বলেন, তারপর রাতের বেলায় মানুষদের ওপর বোমা ফেলেন। এটা আমাদের পছন্দ নয়।”
গত সপ্তাহে অবস্থান পরিবর্তন করে ট্রাম্প জানান, ওয়াশিংটন ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠাবে, যার মধ্যে রয়েছে প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এই প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শত্রুর নিক্ষেপ করা বিভিন্ন ধরণের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও প্রতিহত করতে সক্ষম, বিশেষ করে উচ্চগতির ব্যালিস্টিক মিসাইল। মস্কো যখন ইউক্রেনে রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা বাড়াচ্ছে, তখন এই অস্ত্রটিকে বিশ্বের অন্যতম কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার রোমে ইউক্রেন পুনর্গঠন সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, জার্মানি দুটি প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের জন্য অর্থ দেবে এবং নরওয়ে একটি সরবরাহে সম্মত হয়েছে।জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউরোপের অন্যান্য অংশীদাররাও সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছে।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউক্রেন যেসব মার্কিন অস্ত্র চাইছে, তার কিছু ইতোমধ্যেই ইউরোপে অবস্থানরত ন্যাটো মিত্রদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, এসব অস্ত্র ইউক্রেনে দ্রুত পাঠানো সম্ভব, এবং ইউরোপীয় দেশগুলো সেই সরঞ্জামের বিকল্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনবে।
রুবিও বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি থেকে ইউক্রেনে কিছু পাঠানো অনেক দ্রুত, তুলনায় মার্কিন কারখানা থেকে অর্ডার দিয়ে সেখানে পৌঁছানো।”
রাশিয়ার একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জানায়, ‘ক্লিয়ার স্কাই’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে একটি বিস্তৃত ড্রোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
কিয়েভ সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো জানান, এই প্রকল্পে ২৬ কোটি হ্রিভনিয়া (প্রায় ৫.৩ মিলিয়ন ইউরো) বিনিয়োগ করা হবে, যা ব্যয় হবে ইন্টারসেপ্টর ড্রোন, অপারেটর প্রশিক্ষণ এবং নতুন মোবাইল প্রতিক্রিয়া ইউনিট তৈরিতে।
রুটে সোমবার ও মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে থাকবেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রবিবার রাতে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমি মহাসচিবের সঙ্গে একটি বৈঠক করব, যিনি আগামীকাল আসছেন। আমরা তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠাব এবং তারা তার জন্য শতভাগ মূল্য পরিশোধ করবে।”
গত জুনের শেষদিকে দ্য হেগ-এ অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে সর্বশেষ ট্রাম্প ও রুটের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল।