
অবশেষে প্রকাশ হলো পাকিস্তানি মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর আলির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। বিস্তারিত রিপোর্টে জানা গেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শুক্রবার (১১ জুলাই) জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই করাচির ডিফেন্স ফেজ ৬ এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে হুমাইরার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
প্রথমে মাসখানেক আগে মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছে, প্রায় ৮ থেকে ১০ মাস আগে মৃত্যু হয় ৩২ বছর বয়সি এই অভিনেত্রীর।
পুলিশ সার্জন ডা. সুমাইয়া সাঈদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধারকৃত লাশটি ছিল চরম পচন ধরা অবস্থায় এবং সম্পূর্ণরূপে অপরিচিতযোগ্য।
ময়নাতদন্তের উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ:
- মৃতদেহ ছিল ‘চরম পচন ধরা অবস্থায়’।
- মুখের পেশি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
- আঙুল ও নখ কেবল হাড়ে পরিণত হয়েছে।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে মাংসপেশি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
- হাড় ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়ছিল।
- মস্তিষ্কের টিস্যু সম্পূর্ণ পচে গলে গেছে (অটোলাইসিস)।
- অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিল কালচে ও থেতলানো একদলা মাংসের মতো।
- জয়েন্টের তরুণাস্থি (cartilage) অনুপস্থিত ছিল।
- হাড়ে কোনো ভাঙন বা আঘাতের চিহ্ন মেলেনি।
- মাথা ও কঙ্কাল অক্ষত থাকলেও মেরুদণ্ডের স্নায়ুকাঠামো অনুপস্থিত।
- চুলে বাদামি রঙের পোকা পাওয়া গেলেও কোনো কীটপতঙ্গের লার্ভা (ম্যাগট) পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পচনের স্তর এতটাই চরম পর্যায়ে ছিল যে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ নির্ধারণ বর্তমানে অসম্ভব। তবে ডিএনএ পরীক্ষা ও টক্সিকোলজিক্যাল বিশ্লেষণ চলছে। যেগুলো থেকে পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, চুল, কাপড় ও রক্তের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৮ জুলাই দুপুর সোয়া ৩টার দিকে হুমাইরার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আদালতের নির্দেশে পুলিশ ফ্ল্যাটটি খালি করার জন্য আসে। দরজায় কোনো সাড়া না পাওয়ায় পুলিশ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তার লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, তিনি গত সাত বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে একা বসবাস করছিলেন এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর থেকে কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।
প্রতিবেশীরা জানান, তিনি নিজেকে সব সময় আলাদা রাখতেন এবং ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না।
এক প্রতিবেশী জিও নিউজকে জানান, হুমায়রার বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে জটিলতাও ছিল।
এদিকে হুমাইরার লাশ উদ্ধারের পর তা একটি বেসরকারি দাতব্য সংস্থার হিমঘরে পাঠানো হয়। প্রথম দিকে তার বাবা লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালেও বৃহস্পতিবার ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা করাচিতে এসে লাশ বুঝে নিয়ে লাহোরে চলে যায়। পরে যেখানে পারিবারিকভাবে তাকে দাফন করা হয়।
ত্রিশ পেরোনো হুমাইরা মূলত রিয়েলিটি শো ‘তামাশা ঘর’ ও চলচ্চিত্র ‘জালেবি’-তে অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিতি পান।
তার মৃত্যুতে সহকর্মী অভিনেতা-অভিনেত্রী ও শোবিজ অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে একা থাকা মানুষের খোঁজখবর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে মডেল-অভিনেত্রী হুমাইরার মৃত্যু ঘটে পাকিস্তানের নামকরা বয়োজ্যেষ্ঠ অভিনেত্রী আয়েশা খানের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই। ৭৭ বছর বয়সি এ টেলিভিশন অভিনেত্রীর লাশও করাচির ফ্ল্যাটে একইভাবে নিঃসঙ্গ অবস্থায় পাওয়া যায়।