
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একাধিক দেশকে নতুন করে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এসব চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা বাণিজ্য চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে।
চিঠিগুলো ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের জন্য আরও কঠোর শুল্ক ব্যবস্থা অপেক্ষা করছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ট্রাম্প বেশ কিছু দেশে ‘পারস্পরিক হারে’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও সে সময় অনেক ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিত করা হয়। তবে এবার যেসব দেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য শুল্কহার কিছুটা কম বা বেশি করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে আলোচনায় অগ্রগতি বা পেছনো ঘটেছে।
নিচে তালিকাভুক্ত দেশগুলোর ওপর নির্ধারিত নতুন শুল্ক এবং তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশ
শুল্কহার: ৩৫ শতাংশ (আগস্ট ১ থেকে), পূর্বে ছিল ৩৭ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: পোশাক।
প্রতিক্রিয়া: অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে ভালো সমাধান চাইছে। অতিরিক্ত শুল্ক পোশাক খাতকে ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
মিয়ানমার
শুল্কহার: ৪০ শতাংশ (আগস্ট ১ থেকে), পূর্বে ছিল ৪৪ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও সামুদ্রিক খাবার।
প্রতিক্রিয়া: সামরিক সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জ তুন জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
লাওস
শুল্কহার: ৪০ শতাংশ (আগস্ট ১ থেকে), পূর্বে ছিল ৪৮ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: কাপড়ের ওপর তৈরি জুতা, কাঠের আসবাব, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও অপটিক্যাল ফাইবার।
কম্বোডিয়া
শুল্কহার: ৩৬ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৪৯ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা ও সাইকেল।
প্রতিক্রিয়া: প্রধান আলোচক সান চ্যানথল জানান, তারা শুল্ক ৪৯ থেকে ৩৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে সফল হয়েছেন এবং নতুন করে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
থাইল্যান্ড
শুল্কহার: ৩৬ শতাংশ, পূর্বের হার অপরিবর্তিত।
প্রধান রপ্তানি: কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, রাবারের পণ্য, রত্নপাথর।
প্রতিক্রিয়া: দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী পিচাই চুনহাভাজিরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য, জ্বালানি ও বিমান আমদানির বিষয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সার্বিয়া
শুল্কহার: ৩৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৩৭ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: সফটওয়্যার, আইটি সেবা, গাড়ির টায়ার।
ইন্দোনেশিয়া
শুল্কহার: ৩২ শতাংশ, পূর্বের হার অপরিবর্তিত।
প্রধান রপ্তানি: পাম অয়েল, কোকো বাটার ও সেমিকন্ডাক্টর।
আলজেরিয়া
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বের হার অপরিবর্তিত।
প্রধান রপ্তানি: পেট্রোলিয়াম, সিমেন্ট, লোহার পণ্য।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৩৫ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
ইরাক
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৩৯ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য।
লিবিয়া
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৩১ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকা
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বের হার অপরিবর্তিত।
প্রধান রপ্তানি: প্ল্যাটিনাম, হীরা, যানবাহন ও যন্ত্রাংশ।
প্রতিক্রিয়া: প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার দপ্তর জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক হার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। তারা আগামীতে আরও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
শ্রীলঙ্কা
শুল্কহার: ৩০ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৪৪ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: পোশাক ও রাবারজাত পণ্য।
ব্রুনেই
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ২৪ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: খনিজ জ্বালানি ও যন্ত্রপাতি।
মলডোভা
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ৩১ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: ফলের রস, মদ, পোশাক ও প্লাস্টিকজাত পণ্য।
জাপান
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ২৪ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: গাড়ি, যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিকস।
প্রতিক্রিয়া: প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এই শুল্ককে “চরম দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছেন এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
কাজাখস্তান
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ২৭ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: তেল, ইউরেনিয়াম, ফেরোঅ্যালয় ও রুপা।
মালয়েশিয়া
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ২৪ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: ইলেকট্রনিকস ও বৈদ্যুতিক পণ্য।
প্রতিক্রিয়া: সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং এ বিষয়ে বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বের হার অপরিবর্তিত।
প্রধান রপ্তানি: যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক পণ্য।
প্রতিক্রিয়া: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগস্টের আগে চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আলোচনা দ্রুত করা হবে।
তিউনিসিয়া
শুল্কহার: ২৫ শতাংশ, পূর্বে ছিল ২৮ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ তেল, পোশাক, ফলমূল ও বাদাম।
ফিলিপাইন
শুল্কহার: ২০ শতাংশ, পূর্বে ছিল ১৭ শতাংশ।
প্রধান রপ্তানি: ইলেকট্রনিকস, যন্ত্রপাতি, পোশাক ও সোনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মতো রপ্তানি-নির্ভর দেশের জন্য এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। আগামী দিনে আলোচনা ও কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমেই হয়তো উত্তরণের পথ খুঁজে নিতে হবে এসব দেশকে।
সূত্র:এপি নিউজ