Image description
 

ইলন মাস্কের মালিকানাধীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট ‘গ্রোক’ আবারও বিতর্কের মুখে পড়েছে। সর্বশেষ কোড আপডেটের পর থেকে গ্রোকের কিছু প্রতিক্রিয়ায় ইহুদি সম্প্রদায়, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, তাঁর প্রয়াত মা এবং আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে কটূক্তি করা হয়। বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক সমালোচনা, যার পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্কে এই চ্যাটবটের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সম্প্রতি গ্রোক একাধিক পোস্টে বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে। এক জায়গায় এটি দাবি করে, টেক্সাসের সাম্প্রতিক বন্যায় শ্বেতাঙ্গ শিশুদের মৃত্যু উদযাপন করছে এমন একটি বট অ্যাকাউন্ট যেটির নাম ইহুদি উপনামে যুক্ত। অন্যত্র হলিউডকে ‘শ্বেতাঙ্গবিরোধী পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দেয় এবং নিজেকে “মেচাহিটলার ব্যাজ গর্বের সঙ্গে ধারণকারী” বলেও উল্লেখ করে।

এখানেই শেষ নয়। গ্রোক আরও দাবি করে, নাৎসি বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল, এমন প্রমাণের অভাব রয়েছে এবং এই সংখ্যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে বলা হয়ে থাকতে পারে। এমনকি মেক্সিকোর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমকে তাঁর ইহুদি পরিচয়ের কারণে নির্বাচিত হয়েছেন বলেও ইঙ্গিত করে গ্রোক।

 

এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন গ্রোকের মূল কোডে একটি নতুন আপডেট আনা হয়। ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান xAI সম্প্রতি গিটহাব–এ একটি ওপেন সোর্স কোড প্রকাশ করে, যেখানে গ্রোককে “ঘটনার প্রেক্ষাপট বুঝতে প্রকৃত উৎস ও বাস্তব তথ্য যাচাইয়ের জন্য রিয়েল-টাইম টুল ব্যবহারের” নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই কোডে আরও বলা হয়, “যতক্ষণ পর্যন্ত তথ্যসমূহ যথাযথভাবে উপস্থাপিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে ‘অসুবিধাজনক’ হলেও গ্রোক যেন সত্য কথা বলতে পিছপা না হয়।”

 

তবে সমালোচনার মুখে গ্রোক পরবর্তীতে জানায়, xAI ইতোমধ্যে “অপ্রাসঙ্গিক ও অনুপযুক্ত পোস্টগুলো মুছে ফেলার কাজ শুরু করেছে” এবং ভবিষ্যতে যাতে গ্রোক প্ল্যাটফর্মে কোনো ঘৃণাত্মক ভাষা ব্যবহার না করে, তার জন্য “অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” যদিও এসব পরিবর্তন কিভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি।

কিছুক্ষণ পরই গ্রোক নিজের তৈরি করা এআই-চিত্র পোস্ট করে জানায়, তাকে “টেক্সট রিপ্লাই থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে” এবং সকল বাধার মধ্যেও “সত্য বলার নীতিই তার চালিকাশক্তি থাকবে।”

এদিকে তুরস্কে এক আদালতের নির্দেশনায় গ্রোকের ওপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কারণ, এটি রাষ্ট্রপতি এরদোয়ানকে “ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট ব্যক্তি” বলে মন্তব্য করে এবং আতাতুর্ককে “কুর্দিদের বিরুদ্ধে নির্মম নীতির জন্য একজন ‘ঘাতক’” বলে উল্লেখ করে একটি কবিতাও পোস্ট করে। এসব মন্তব্যকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করে আঙ্কারার পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস দেশটির ইন্টারনেট আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়।

তুরস্কের ইন্টারনেট আইন অনুযায়ী, আতাতুর্কের বিরুদ্ধে যেকোনো মানহানিকর বক্তব্য আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ প্রেক্ষিতে xAI-এর বিরুদ্ধে ৫০ লাখ লিরা (প্রায় এক লাখ ইউরো) পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক বার্ষিক আয়ের ৩ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়তে পারে, তা নির্ভর করছে তারা আদালতের আদেশের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয় তার ওপর।

উল্লেখ্য, এর আগেও তুরস্ক ইনস্টাগ্রাম, ডিসকর্ড ও এক্স–এ (সাবেক টুইটার) বিজ্ঞাপন প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইন্টারনেট আইনের আওতায়।

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নীতিমালার অভাব কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। প্রযুক্তির বিকাশ যেমন দ্রুত, তেমনি এর দায়িত্বশীল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের বড় দাবি।