
ইসরায়েলি গোয়েন্দা বাহিনীর অভিযান অনেক সময়ই থ্রিলার উপন্যাসকেও হার মানায়। সম্প্রতি ইরানের সামরিক কর্মকর্তা এবং শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে চালানো একাধিক সফল হামলার মাধ্যমে আবারো বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা তৎপরতা। বিশেষ করে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে একের পর এক আক্রমণ ইসরায়েলি প্রযুক্তির নিখুঁত ব্যবহার নিয়ে জল্পনা বাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব অভিযানের পেছনে কাজ করছে ইসরায়েলের কয়েকটি অতি গোপনীয় গোয়েন্দা ইউনিট। মূলত মোসাদ ও শিন বেট-এর অধীনে পরিচালিত হয় ইউনিট 8200, ইউনিট 9900 এবং ব্রাঞ্চ 54 নামের উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর এই ইউনিটগুলো।
ইউনিট 8200: ডিজিটাল গোয়েন্দার প্রথম সারিতে
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা তৎপরতার মূল কেন্দ্র হলো ইউনিট 8200। এই ইউনিটের কাজ হলো কমিউনিকেশন সিস্টেমে আড়ি পাতা (ওয়ার ট্যাপিং), সিগন্যাল বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য আহরণ এবং সাইবার হামলা সনাক্তকরণ।
এরা অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করে যেগুলোর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে পাঠানো হয় ইসরায়েলি কমান্ড সেন্টারে। সাইবার গোয়েন্দাগিরিতে এই ইউনিট এখন বিশ্বের অন্যতম পরাক্রমশালী হিসেবে বিবেচিত।
ইউনিট 9900: স্যাটেলাইট ও থ্রিডি ম্যাপের জাদুকর
ছবি, ভিডিও এবং মানচিত্রভিত্তিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য সক্রিয় রয়েছে ইউনিট 9900। এই ইউনিট স্যাটেলাইট, ড্রোন ও গোয়েন্দা বিমান ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করে এবং সেনাবাহিনীর জন্য থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করে দেয়।
বিশেষ করে ইরানকে লক্ষ্য করে এই ইউনিট স্যাটেলাইট ‘হরাইজন ১৩’-এর মাধ্যমে নজরদারি চালায়, যেটা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ব্রাঞ্চ 54: গোপন ঘাঁটি ও সরাসরি আক্রমণের রূপরেখা
মাত্র ৩০ সদস্য বিশিষ্ট ব্রাঞ্চ 54 ইউনিটের প্রধান কাজ ইরানের সামরিক তৎপরতা, প্রশিক্ষণ কৌশল ও সম্ভাব্য আক্রমণের স্থান চিহ্নিত করা। তারা ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী (Revolutionary Guards) এবং তাদের সামরিক অবকাঠামো ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে।
চলমান সংঘাতের আগে এই ইউনিটের সহায়তায় ইসরায়েলি বাহিনী গোপনে ইরানে ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন করে। এই ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হয় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিস্ফোরণ।
মোসাদের ভূমিকা: নিখুঁত আক্রমণের কারিগর
এই পুরো অভিযানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে মোসাদের এজেন্টরা সরাসরি তেহরানের মাটিতে সক্রিয় ছিল। অস্ত্র পাচার, ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে ইসরায়েলি কমান্ডোদের সহায়তা করেছে তারা।
ফলে ইসরায়েলি বিমানগুলো স্বাধীনভাবে ইরানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে টার্গেটকৃত শীর্ষ জেনারেলদের হত্যা ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়—সবকিছুই গোপনে, প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা শক্তির নির্ভুল ব্যবহারে।