
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আবাসনসংক্রান্ত সংকট নিরসনে চার দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
রোববার (২৯ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেয় সংগঠনটি।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবাসনসংক্রান্ত কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত বা সময়সীমা এখনো জানানো হয়নি। অথচ তাদের নিয়মিত পাঠদান আগামী ২রা জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে নবাগত শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা চরম অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যে পার করছেন। নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই উদ্বেগ আরও প্রকট হয়ে ওঠেছে।
ছাত্রশিবির দাবি করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হলে সিট পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং প্রথম বর্ষেই সিট বরাদ্দ পাওয়া তাদের একটি মৌলিক ও ন্যায্য অধিকার। এই প্রেক্ষাপটে তারা চারটি দাবি উত্থাপন করেছে—
১। নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য অবিলম্বে আবাসনসংক্রান্ত একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীর আবাসিক থাকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, তাদের সিট বাতিল করে নবাগতদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। সিট বরাদ্দে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
২। সিট সংকটের অস্থায়ী সমাধান হিসেবে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেখান থেকে মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হলে স্থানান্তরের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩। অথবা, শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা হারে আবাসনভাতা (বৃত্তি) প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যতদিন সিট বরাদ্দ সম্ভব না হবে, ততদিন এ ভাতা বহাল থাকবে। সিট বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বৃত্তি বন্ধ হয়ে যাবে।
৪। জুলাইয়ের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই গণরুম সংস্কৃতির কবর রচিত হয়েছে সেই সংস্কৃতি যেন শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আবারও ফিরে না আসে। প্রশাসন যেন কোনভাবেই সংকটের আপাত সমাধান হিসেবে গণরুম সৃষ্টির অপচেষ্টা না করে।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রশিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ক্যাম্পাসে আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু মহল (বড় ভাই) সেজে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিচ্ছে ‘তোমাদের সিট দেব, তোমরা চলে এসো’। এতে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সাময়িকভাবে আশ্বস্ত হলেও, এটি একটি সুপরিকল্পিত ফাঁদ। আবাসন সংকট এখনো নিরসন না হওয়ায়, এই সুযোগকে ব্যবহার করে তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। ফলে শেষমেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরাই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি—যাতে তারা অবিলম্বে আবাসন সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। এছাড়াও আমরা প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেন ‘গণরুম’ সংস্কৃতি আবারও হলে ফিরে না আসে।
ছাত্রশিবিরের ভাষ্য অনুযায়ী স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপাচার্য আশ্বস্ত করে বলেন, ডিন’স কমিটি, প্রভোস্ট কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রদের আবাসন সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় নেওয়া করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর পূর্বেও ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ছাত্রীদের আবাসন বৃত্তি প্রদানের দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রীদের আবাসন ভাতা প্রদানের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।