
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য জোহরান মামদানি। চলতি বছরের ৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিজয়ী হলে জোহরান মামদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম এবং প্রথম মুসলিম মেয়র ।
মামদানির জন্ম, পরিচয় ও শিক্ষাজীবন
জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর উগান্ডার কাম্পালায়। তার বাবা মাহমুদ মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডান মুসলমান। তিনি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। মা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার।
জোহরান মামদানির যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তার পরিবার উগান্ডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যায়। এর দুই বছর পর তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে গিয়ে স্থায়ী হন।
বোদোইন কলেজে অধ্যয়নের সময় মামদানি আরো কয়েকজনের সাথে ‘প্যালেস্টাইনে স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস’ আন্দোলন শুরু করেন। এই কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
কর্মজীবন
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে জোহরান মামদানি আবাসন পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন। কুইন্সের নিম্ন আয়ের অশ্বেতাঙ্গ বাড়ির মালিকদের ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের নোটিশ এবং তাদের বাড়িতে থাকার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতেন তিনি। এই অভিজ্ঞতা তাকে আবাসন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়কে সামনে নিয়ে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
রাজনৈতিক জীবন
জোহরান মামদানি একজন ডেমোক্র্যাট। ২০১৫ সালে সিটি কাউন্সিলের ২৩তম ডিস্ট্রিক্টের জন্য বিশেষ নির্বাচনে আলী নাজমির প্রচারণায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
২০২০ সালে তিনি নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই সময়েই তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন একজন সমাজতান্ত্রিক, মুসলিম ও স্পষ্টভাষী আইনপ্রণেতা হিসেবে। তিনি ২০২২ এবং ২০২৪ সাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন।
মামদানি মুসলিম ডেমোক্র্যাটিক ক্লাব অব নিউইয়র্কের সদস্য। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মামদানি নয়টি অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্য ছিলেন।
রাজনৈতিক মতাদর্শ
জোহরান মামদানি নিজেকে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য।
মেয়র নির্বাচন
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর নিউউয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন জোহরান মামদানি। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি, গাজা যুদ্ধ, নিউইয়র্কে আবাসন সঙ্কট, পুলিশি বর্বরতা এবং শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে নগরবাসীর মধ্যে এক অদৃশ্য ক্ষোভ জমছিল।
জোহরান সেই ক্ষোভের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেন। মেয়র হলে এ সিটিতে সাশ্রয়ী আবাসান, ন্যায্যমূল্যের সিটি গ্রোসারি, বিনামূল্যে সিটির পরিবহন সেবা চালু করার অঙ্গীকার করেন মামদানি।
ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়
মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয় পেয়েছেন মুসলমান তরুণ জোহরান মামদানি। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান তিনি। প্রাইমারির ফলাফল মেনে নিয়েছেন নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর কুমো।
মামদানি ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মেয়র পদে ৫৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কট
মামদানি ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং ইসরাইলের কট্টর সমালোচক। তিনি গাজায় ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানান এবং ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’
ব্যক্তিগত জীবন
২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান জোহরান মামদানি। তার স্ত্রী সিরীয় বংশোদ্ভূত রামা দুয়াজি।