
৭ অক্টোবর, ২০২৩, ইসরাইলের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দিন। গাজা থেকে হামাসের ছোড়া প্রায় সাড়ে চার হাজার রকেটের তীব্র আঘাতে কেঁপে ওঠে ইহুদি ভূখণ্ড। দেশটির ৭৭ বছরের ইতিহাসে এমন ভয়াবহতা আর দেখা যায়নি। প্রাণ হারান প্রায় দুই হাজার মানুষ। ‘অপ্রতিরোধ্য’ হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলেও ভেদ হয় নিরাপত্তার দেয়াল।
এই হামলার প্রতিশোধে গাজায় শুরু হয় একের পর এক বিমান হামলা, যাকে আন্তর্জাতিক মহল সরাসরি গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে এসব সামরিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও দিন দিন কমে যাচ্ছিল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা। এমন এক টালমাটাল প্রেক্ষাপটে, ইরানকে লক্ষ্য করে এক বড়সড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন তিনি।
ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তেল আবিবের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দাবি করা হয়—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের অক্টোবরেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। ওই হামলায় ধ্বংস করা হয় ইরানের রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ইউনিট, একই সঙ্গে হত্যা করা হয় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের।
প্রতিবেদন বলছে, ওই সময়েই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-কে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দেন নেতানিয়াহু। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের অভিযানের সফলতা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের। ফলে যুদ্ধ পরিকল্পনা এগোলেও বেশ কয়েক দফা পিছিয়ে যায় বাস্তবায়ন।
এরই মধ্যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন সফর করেন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চাইলেও, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে ইরানের পরমাণু বোমার অস্তিত্ব নিয়ে তেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য ছিল না।
এদিকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে যখন নতুন করে পরমাণু চুক্তির আলাপ এগোচ্ছিল, তখন স্পষ্ট হয়—ইসরায়েলের প্রতিশোধ পর্বও মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে। ঠিক তখনই ১৩ জুনের প্রথম প্রহরে, চুপিসারে তেহরানে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ কাঠামো ধ্বংস করাই ছিল নেতানিয়াহুর মূল উদ্দেশ্য।
বার্তা সংস্থা এপি তাদের বিশ্লেষণে বলছে, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্যই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন ৭৫ বছর বয়সী ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির মামলায় চাপে থাকা, জোট সঙ্গীদের হুমকি ও ভাঙনের আশঙ্কা এবং হামাস প্রতিহত করতে না পারার ব্যর্থতায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তখন পড়েছিল অস্তমিত সূর্যের পথে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=eKBCxz3fPjk