
Shafin Rahman(শাফিন রহমান)
সিএনএন এবং নিউইয়র্ক টাইমস বলছে: ফোর্ড নিউক্লিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংস করতে মোট ছয়টি বি-২ স্পিরিটি বোম্বার থেকে বারোটি জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনট্রেটর বোম ড্রপ করা হয়েছে। এবাদে ইস্ফাহান এবং নাতাঞ্জ নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিতে ইউএসএস জর্জিয়া সাবমেরিন থেকে ৩০টি টমাহক ল্যান্ড এটাক ক্রুজ মিসাইল লঞ্চ করা হয়েছে।
ফোর্ডের ব্যাপারে বলতে গেলে, ইউএস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ইসরাইল অফিসিয়াল যে ধরনের বর্ননা দিচ্ছেন, তা ফোর্ডের ড্যামেজের সাথে মিলছে না।
ফোর্ড নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি ভূগর্ভের প্রায় ৮০ মিটার নীচে। এটি তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে ‛Ultra High Performance Concrete'― (UHPC)
ট্রাডিশনাল কংক্রিটের তুলনায় আল্ট্রা হাই পারফরম্যান্স কংক্রিট দশ গুন বেশি শক্তিশালী। ইরান ৮০'র দশক থেকেই এধরনের কংক্রিট তৈরি করে আসছে।
২০০৬/০৭' সনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে জিবিইউ-৫৭ দ্বারা ইউএইচপিসি টাইপ কংক্রিটের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে। সেখানে দেখা যায়, জিবিইউ-৫৭ মাত্র ছয় মিটার পেনট্রেট করতে সক্ষম হয়েছে। তবে একথাও সত্য যে, যদি পিনপয়েন্ট হিটে মাল্টিপল জিবিইউ-৫৭ বাঙ্কারে প্রবেশ করে তাহলে ভেতরের কোনো কিছুই আর ঠিক থাকবে না।
তো এরকম পাহাড় আর ভেতরে কংক্রিটের আস্তরণ ভেদ করে ফ্যাসিলিটি ধ্বংস করতে হলে অবশ্যই টাইট সিকুয়েন্সিং, ভেক্টর কনভারজেন্স, টেলিমেট্রি কনফার্মেশন এবং রিয়েল টাইম ড্যামেজ লেয়ারিং প্রয়োজন। কিন্তু এমন কোনো কিছু দেখা যায়নি।
ফোর্ড নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটিতে যদি সত্যিই ম্যাসিভ ডিস্ট্রাকশন হতো তবে কিছু ব্যাপার অবশ্যই লক্ষ্যনীয় হতো। যেমন: ক্রেটার, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেপচার, ইমারজেন্সি এয়ারলিফট, সিসমোগ্রাফিক লাইট, সেন্ট্রিফিউজ কিংবা আইআর ফ্লেয়ার ইত্যাদি। অথচ এমন কিছুই দেখা যায়নি।
তবে হ্যাঁ, চৌদ্দটা জিবিইউ-৫৭ অর্থাৎ প্রায় পনেরো টন বোমার এটাকে এক্কেবারে কিছু হবেনা তাও সত্য নয়। সার্ফেস লেভেল সহ আন্ডারগ্রাউন্ডে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। যেমন: Meteosat-9 এ ৩.৯০ মাইক্রোমিটার ওয়েবলেন্থ এর ইনফ্রারেড রেডিয়েশন ডিটেক্ট হয়েছে। অর্থাৎ ভেতরে ২০% কাছাকাছি ক্ষতি হয়েছে; যা ইরানকে তার নিউক্লিয়ার এম্বিশন থেকে মিনিমাম তিন থেকে ম্যাক্সিমাম পাঁচ বছরের জন্য পিছিয়ে দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র এই স্ট্রাইক পরিচালনা করেছে শুধুমাত্র মৃতপ্রায় ইসরাইলকে টেনে তুলতে এবং এই স্ট্রাইক একটি ব্যালেন্সিভ স্ট্রাইক। কারন উক্ত স্ট্রাইকের মাধ্যমে ইরান ইসরাইল দুজনকেই শিক্ষা দেওয়া হলো আবার দুজনেরই মন রক্ষা করা হলো। যেমনঃ ইরানকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করার সক্ষমতা থাকলেও তা করা হয়নি বরং কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়ে নেগোসিয়েশনের পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কথা অমান্য করে এই যুদ্ধ ইসরাইল শুরু করলেও শেষ করার মুরোদ তার ছিলো না। তাই সেটাকে শেষ করে দিয়ে গেলো যুক্তরাষ্ট্র।
এখন ইরান প্রতিশোধের জন্য কিছু মার্কিন বেসে ফেস সেভিং এটাক করবে যেমনটা এর পূর্বেও করেছে এবং আগামী দুই অথবা তিন সপ্তাহ যাবৎ ইসরাইলে মিসাইল হামলা অব্যাহত রাখবে ড্যামেজ কন্ট্রোলের অংশ হিসেবে। অতঃপর সবকিছুই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।