Image description
ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপে চীনের কড়া বার্তা

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো মুখ খোলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইরানে ইসরাইলের হামলায় ‘মধ্যপ্রাচ্যে হঠাৎ উত্তেজনা বৃদ্ধি’ পাওয়ায় চীন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। চীন-মধ্য এশিয়ার দুদিনের শীর্ষ সম্মেলনে শি তখন কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরই সাম্রাজ্য পতনের ইতিহাস টেনে বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন শি জিনপিং। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্ব চলবে।’ সিএনএন, সিনহুয়া, রয়টার্স।

এক্স-বার্তায় অতীতের পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের ধ্বংসকে স্মরণ করে শি লিখেছেন, ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিশ্ববাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। বিশ্বের ২০ শতাংশেরও বেশি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। অনেকে বিশ্বাস করতেন এর সূর্য কখনো অস্ত যাবে না। এছাড়া ২০০ বছর আগে ফ্রান্স ইউরোপের মঞ্চে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাদের সেনাবাহিনী ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল। সংস্কৃতি ছিল ঈর্ষার বিষয়। নেপোলিয়ন নিজেকে অমর ঘোষণা করেছিলেন। ৪০০ বছর আগে স্প্যানিশ রাজত্ব ম্যানিলা থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত শাসন করেছিল। প্রতিটি সাম্রাজ্য নিজেকে অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু প্রতিটিই শেষ পর্যন্ত ম্লান হয়ে গেছে। শি আরও লিখেছেন, ‘ক্ষমতা হ্রাস পায়। প্রভাব স্থানান্তরিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র যদি বিশ্বে সম্মান হারায় তবে তারাও সেই দেরিতেই শিখবে। বিশ্ব এগিয়ে যায় সব সময়।’ তারবার্তায় সম্মান হারানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা নেওয়ারই আহ্ববান জানিয়েছেন শি। চীনা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। শি বলেছেন, ‘চীন অন্য কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা কিংবা আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে। সামরিক সংঘাত কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বরং এটি আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থের পরিপন্থি।’ শিগগিরই এই উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিনই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ‘অবৈধ হামলা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলো বর্তমান সংকটাপন্ন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শত্রুতার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছে দেশটি। একইদিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানও ক্রুদ্ধ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গণহত্যার ক্ষেত্রে হিটলারকে ছাড়িয়ে গেছেন।’ আরও বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।’ ইসরাইলের অবৈধ আক্রমণের বিরুদ্ধে ইরানের আত্মরক্ষা স্বাভাবিক এবং বৈধ বলেও মন্তব্য করেছেন এরদোগান। চলমান এ সংঘাতে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানকে দোষারোপ করছে জি-৭ জোটের নেতারা। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার জন্য ইরানকেই দায়ী করেছেন তারা। পাশাপাশি সোমবার রাতে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে জি-৭ জোটের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ বছর কানাডায় অনুষ্ঠিত হয় ৫১তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে এবারের দুদিনের সম্মেলন অনেকটা আড়ালেই পড়ে যায়।