Image description

বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত সাঈদ ইরাভানি। এ হামলার লক্ষ্য সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের দূত ইয়েশিয়েল লেইটার বলেছেন, “ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে পুরোপুরি ধ্বংস করার লক্ষ্যেই দেশটিতে হামলা করা হয়েছে।”

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লেইটার বলেন, “আমরা ইরানের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধের মধ্যে আছি। আমাদের যুদ্ধ ইরানের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে নয়। আমাদের লক্ষ্য একটাই— ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া থেকে বিরত রাখা।”

ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসের ব্যাপার ইসরায়েল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ উল্লেখ করে লেইটার বলেন, “আমাদের হিসাব বলছে, আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আমরা ইরানের পরমাণু প্রকল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলতে পারব। মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ববাসীর মঙ্গলের জন্য এটা আমাদের করতে হবে।”

কিন্তু হামলার মূল লক্ষ্য কী শুধু পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ? কী বলছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী? বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবার রাত ১টা ১৭ মিনিটে নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে ‘ইরানের গর্বিত জনগণের উদ্দেশে’ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “আমরা ইতিহাসের অন্যতম সেরা সামরিক অভিযান অপারেশন রাইজিং লায়ন-এর মাঝখানে আছি। প্রায় ৫০ বছর ধরে আপনাদের ওপর অত্যাচারকারী ইসলামী শাসনব্যবস্থা আমাদের দেশ, ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে।”

নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েলের অভিযানের উদ্দেশ্য হল আমাদের প্রতি ইসলামি শাসনব্যবস্থার পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকিকে ব্যর্থ করা।”

পোস্টে ইরানি জনগণকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথও পরিষ্কার করছি।”

তিনি বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, সিনিয়র পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইসলামি শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগারের একটি বড় অংশকে সরিয়ে দিয়েছি।”

‘আরও কিছু করার পথে’ জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “সরকার (ইরানি সরকার) জানে না কী তাদের আঘাত করেছে, বা কী তাদের আঘাত করবে। এটি কখনো দুর্বল হয়নি।”

ইরানি জনগণকে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্ররোচিত করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটি আপনার জন্য উঠে দাঁড়ানোর এবং আপনার কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ।”

এসময় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’- এই শ্লোগান উদ্ধৃত করেন নেতানিয়াহু।

‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ হল কুর্দি নারী অধিকার আন্দোলন থেকে উদ্ভূত একটি স্লোগান। ২০২২ সালে ইরানে জিনা মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভের সময় বিশ্বব্যাপী এটি স্বীকৃতি লাভ করে। স্লোগানটির ফারসি অনুবাদ হল ‘জান, জেন্দেগি, আজাদি’। শ্লোগানটি নারীদের ‘মৌলিক অধিকারের’ ওপর জোর দেয়, যার মধ্যে রয়েছে তাদের জীবনযাপন এবং পোশাক পরার স্বাধীনতা। 

তিনি বলেন, “যেমনটি আমি গতকাল এবং আগেও অনেকবার বলেছি, ইসরায়েলের লড়াই ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই সেই ‘খুনি’ ইসলামি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা আপনাদের নিপীড়ন করে এবং দরিদ্র করে।”

“ইরান জাতি এবং ইসরায়েল জাতি মহান সাইরাসের সময় থেকেই বন্ধু” বলেও উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “ইরানি জনগণের জন্য সময় এসেছে তাদের পতাকা এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের চারপাশে একত্রিত হওয়ার, দুষ্ট ও নিপীড়ক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দাঁড়ানোর মাধ্যমে।”

ইরানের জনগণকে ‘সাহস’ দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আলো অন্ধকারকে পরাজিত করে।”

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে প্রথম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইসরায়েল ও ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হয়। ওই বছরের ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানী দূতাবাস সংলগ্ন ইরানী কনস্যুলেট অ্যানেক্স ভবনটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় আঘাত হানে। এতে ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) একজন সিনিয়র কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং অন্যান্য ৭জন আইআরজিসি অফিসারসহ ১৬জন জন নিহত হন। এরপর ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।শীর্ষনিউজ