
ইসরায়েলের ইরানে আকস্মিক হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে। সামনের সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ার প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এর আগে গরমের ছুটির মৌসুমে সাধারণত সামান্য পরিমাণে জ্বালানির দাম বাড়লেও চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে পরিস্থিতি বদলে গেছে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার কারণে। ইরান এই হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের জবাব কতটা কঠোর হবে এবং তা মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিশ্বে তেলের সরবরাহ ব্যাহত করে কিনা, তার উপর নির্ভর করছে বাজারের ভবিষ্যৎ।
ইতোমধ্যেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির দাম রাতারাতি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। শুক্রবার মধ্যাহ্নে মার্কিন তেলের দাম ৬ শতাংশ বেড়ে ছিল, যা ২০২৩ সালের এপ্রিলের পর একদিনে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির রেকর্ড। পুরো সপ্তাহে তেলের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ—যা ২০২২ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।
GasBuddy-এর জ্বালানি বিশ্লেষক প্যাট্রিক ডি হান সিএনএনকে জানিয়েছেন, “বর্তমানে আমরা কেবল এই সঙ্কটের শুরুতেই আছি। কিন্তু ইরান এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা বলায় সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।” তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্যালনে ১০ থেকে ২৫ সেন্ট পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।
জ্বালানির সরবরাহে বড়সড় ঝুঁকি
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইরান বড় পরিসরে হামলা চালায়—বিশেষ করে স্ট্রেইট অব হরমুজে যেখানে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বিশ্ববাজারে যায়—তাহলে তা সরবরাহে বিশাল ধাক্কা দিতে পারে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথ, যা পারস্য উপসাগরকে বিশ্বের অন্য অংশের সঙ্গে যুক্ত করে।
RBC ক্যাপিটাল মার্কেটসের হেলিমা ক্রফট বলেন, “ইরান যদি ২০১৯ সালের মতো ফের জাহাজ, পাইপলাইন বা গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনায় হামলার পথ বেছে নেয়, তাহলে তেলের দাম আরও অনেক বেশি বাড়তে পারে।”
Rystad Energy বলছে, যদি ইরান কেবল ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় সীমিত হামলা চালায়, তবে বাজারে প্রভাব নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং জ্বালানির দাম বাড়লেও তা অস্থায়ী হতে পারে।
তেলের দাম $১০০ ছুঁতে পারে?
গোল্ডম্যান স্যাকস আশঙ্কা করছে, যদি স্ট্রেইট অব হরমুজে দীর্ঘ সময় ধরে সরবরাহ ব্যাহত হয়, তাহলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি $১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে এমন পরিস্থিতি খুব একটা সম্ভাব্য নয়।
তবে তারা সতর্ক করে বলেছে, ইরানের রপ্তানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরবসহ ওপেকের মজুত থেকে সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
ওপেক ও জরুরি মজুত নিয়ে আলোচনা
জ্বালানি সরবরাহে বড় সংকট দেখা দিলে ওপেক দেশগুলো তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (SPR) থেকে জরুরি তেল ছাড়া হতে পারে। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (IEA) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল বলেছেন, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ১.২ বিলিয়ন ব্যারেল জরুরি মজুত ব্যবহার প্রস্তুত রয়েছে। তবে ওপেক এই ধরনের ঘোষণায় ‘ভয়ের বার্তা’ ছড়ানোর অভিযোগ করেছে এবং জরুরি মজুত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
সূত্র: সিএনএন