Image description

তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজ নামকস্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানি ভারত তাদের খেয়াল খুশি মতো নিয়ন্ত্রণ করেই যাচ্ছে । এই ঘটনা কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং প্রতিবেশী দেশ' ভারতের অমানবিক আচরণের প্রমাণ। শুকনো মৌসুমে ভারত তিস্তা নদীর উপরের বাঁধগুলো বন্ধ করে রাখে, যার ফলে বাংলাদেশে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। আর বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।

এই 'বন্ধুত্বের' নামে চলছে দীর্ঘদিন ধরে এই অমানবিক খেলা। ভারতের এই আচরণ শুধুমাত্র বিষম ব্যবহারই নয়, আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতিরও চরম  লঙ্ঘন। 

এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুরসহ আশপাশের ৪-৫ জেলার অনাবাদী জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি ফসল উৎপাদনের লক্ষে নির্মিত হলেও সুষ্ঠু ব্যবহারের অভাবে এটি  উত্তরের মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯০ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের পিত্তিফাটা নামক স্থানে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়। সেই বছরের ৫ আগষ্টে এর উদ্বোধন করা হয়। এটি স্থানীয়দের কাছে ডালিয়া ব্রিজ  নামেও পরিচিত। 

নির্মাণকালে প্রকল্পে ব্যারেজের পূর্ব ও পশ্চিম তীর রক্ষা বাঁধের কথা থাকলেও সে সময় শুধু পশ্চিম তীর রক্ষা বাঁধ নির্মিত হয়। কিন্তু পূর্ব তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। 

তিস্তা ব্যারেজ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ৬১৫ মিটার দীর্ঘ এ ব্যারেজে ৫২টি গেট রয়েছে। এরমধ্যে ৪৪টি গেট তিস্তা নদীর মূল ধারা প্রবাহের এবং বাকী ৮টি সেচ প্রকল্পের জন্য তৈরি করা হয়। সেচ প্রকল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সিলট্রাফ খনন করা হয়।
 
সূত্র জানায়, ব্যারাজের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ৫২ দশমিক ৪০ সেমি। স্বাভাবিক সময়ে পানি প্রবাহ ২০ হাজার কিউসেক ধরা হলেও ৪ লাখ কিউসেক পর্যন্ত পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে এ ব্যারেজের। তবে পানি এর চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও ব্যারেজ রক্ষার লক্ষে লালমনিরহাট অংশে করা হয়েছে বাইপাস সড়ক।
 
অপরদিকে, বাকী ৪৪টি গেট দিয়ে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি তিস্তার মূলধারায় প্রবাহিত হয়। কিন্তু পূর্ব তীর রক্ষা বাঁধ না থাকায় এ সময়ে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ এ অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। নষ্ট হয়ে যায় বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য ও ফসল। একই রকম দুর্ভোগ শুষ্ক মৌসুমেও।

এ সময় খরা আর তিস্তায় পানি না থাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি  জেলার বৃহৎ এলাকা। তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগী মানুষজন বলছেন, যখন পানি চাই, তখন পাই না, আর যখন পানির কোনো প্রয়োজন নেই , তখন পানিতে ভেসে বেড়াই, এভাবে আক্ষেপের সূরে কথাগুলো জানালেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তাতীরবতী গ্রামের সাবেক স্কুল শিক্ষক মফিজ উদ্দিন। 

তিনি ভারতের অমানবিক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বার বার আলোচনা হয়েছে কিন্তু পানিবন্টন চুক্তির বিষয়টি সুরাহা করা হয়নি। এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত দুংখজনক বলে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ নামকস্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এমনটি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী মানুষজন।

তিস্তাকে বলা হয়ে থাকে উত্তর জনপদের জীবনরেখা। সেই তিস্তার বুকে ভারতীয় অংশে টইটুম্বুর পানি থাকলেও একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারনে এর বাংলাদেশ অংশ শুস্ক মেসুমে মরাখাল। ফলে এ সময়ে অস্তিত্ব সংকটে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র, হুমকিতে  পড়ে। আর এ নদীর জজলরাশি ওপর জীবিকা নির্ভর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন  হয়ে পড়ে বিপন্ন।

পানি বন্টনের ব্যাপারে ভারতের একগুয়েমিতা, অনৈতিক ঢিলেমি আর হঠকারিতায়  তিস্তা তীরবর্তী ও এর আশেপাশের প্রকৃতি শুস্ক মৌসুমে রুক্ষ থাকে। অন্যদিকে বর্ষায় ভারত বন্যা নিয়ন্ত্রনে গজলডোবার সব গেট খুলে দেয়। তখন মূল গতিপথ বদলিয়ে তিস্তা প্রচন্ডভাবে আছড়ে পড়ে দুই তীরে। ভাঙ্গে বসতভিটা বিলীন হয় ফসলি জমি। প্রতিবছর নিঃস্ব হতে থাকে হাজার হাজার পরিবার। আবার ঠিক শুস্কু মৌসুমে প্রশস্ত তিস্তা শুকিয়ে যেন হয়ে যায় মরা খাল। 

এ সময় মাইলের পর মাইল শুধু বালুচর পায়ে হেটে মূল ভু-খন্ডে আসতে হয় চরাঞ্চলের মানুষকে। শুধু তাই নয়, মৎস্যজীবীরা তাদের বাপ-দাদার পুরনো পেশা ছেড়ে দিনমজুর কিংবা গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে শহরে গিয়ে পাড়ি জমায় ছিন্নমূল। ছোট ছোট খেয়াখাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ 
 
শীর্ষনিউজ