Image description
 

চীনের উহান শহরের এক পিএইচডি গবেষককে যুক্তরাষ্ট্রে ‘জৈব উপাদান’ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সূত্রস্থল হিসেবে বিবেচিত উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরণের দ্বিতীয় ঘটনায় এক সপ্তাহের মধ্যে ফের গ্রেপ্তার হলেন চীনের নাগরিক।

 

মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, চেংশ্যুয়ান হান নামের এই গবেষককে ডেট্রয়েট শহরে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চারটি পার্সেল পাঠিয়েছিলেন, যেগুলোর মধ্যে জৈব উপাদান ছিল বলে অভিযোগ।

তদন্তকারীরা জানান, পার্সেলগুলোর বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও তা রাউন্ডওয়ার্ম–এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এফবিআই প্রধান কাশ প্যাটেল সামাজিক মাধ্যমে বলেন, গতকাল এফবিআই দ্বিতীয় চীনা নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে জৈব উপাদান পাচার ও ফেডারেল কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।  ওই ব্যক্তি হলেন চেংশ্যুয়ান হান, তিনি চীনের নাগরিক এবং উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরনের অভিযোগে তৃতীয় চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হলো।

এর আগে ৪ জুন চীনা এক দম্পতিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক জৈব উপাদান পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। সেই উপাদানকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কৃষিভিত্তিক সন্ত্রাসে ব্যবহারের উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়।

চেংশ্যুয়ান হানের উহান–সংযোগ বিশেষভাবে সন্দেহ তৈরি করছে, কারণ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই দাবি করে আসছে যে, কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্ভবত একটি চীনা সরকারি গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছিল।

হানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি চীনের উহান শহর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাগারে কর্মরত চারজন ব্যক্তির কাছে চারটি পৃথক পার্সেল পাঠিয়েছেন।

মার্কিন ফেডারেল প্রসিকিউটর জেরোম এফ. গোরগন বলেন, উহানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিদেশি শিক্ষার্থী কর্তৃক এই ধরনের জৈব উপাদান পাচারের অভিযোগ একটি উদ্বেগজনক প্রবণতার অংশ—যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রথমে হান পার্সেলগুলো সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন, তবে পরে এফবিআই ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় দোষ স্বীকার করেন বলে জানান তদন্তকারীরা। তিনি জিজ্ঞাসাবাদের আগের দিনই নিজের ইলেকট্রনিক ডিভাইস মুছে ফেলেন।

এফবিআই প্রধান জানান, ৮ জুন ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর হান পার্সেলগুলো সম্পর্কে ভুল তথ্য দেন এবং তার আগেই নিজের ডিভাইস মুছে ফেলেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পার্সেল পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন এবং তাদের প্রকৃত বিষয়বস্তু গোপন করার কথাও জানান।

৪ জুনের অন্য ঘটনায় চীনের নাগরিক জুনইয়ং লিউ (৩৪) এবং ইউনকিং জিয়ান (৩৩) ফুসারিয়াম গ্রামিনিয়ারাম নামের একটি ছত্রাক পাচারের চেষ্টা করেছিলেন, যেটি বৈজ্ঞানিকভাবে ‘কৃষি-সন্ত্রাসবাদে’ ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি ফসল ধ্বংস করে দিতে পারে এবং মানুষের পাশাপাশি প্রাণীর বমি, লিভার ক্ষতি ও প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

তদন্ত অনুযায়ী, চীনা গবেষক লিউ যুক্তরাষ্ট্রে তার বান্ধবী জিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এই ছত্রাক নিয়ে আসেন, যা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ব্যবহৃত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এফবিআই-এর কাশ প্যাটেল বলেন, এই দুই ঘটনার মধ্য দিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে আমেরিকান গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রচেষ্টারই প্রমাণ মেলে। 

তবে তিনি জানান, এই ধরনের বিপজ্জনক উপাদান পাচার ঠেকাতে এফবিআইসহ মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।