
ঈদুল আজহার দিনে শুক্রবার (৬ জুন) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাফায় সহায়তা কেন্দ্রের আশপাশে গুলিবর্ষণ ও গোলাবর্ষণে নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন। এই হতাহতের ঘটনা ঘটে এমন এক সময়, যখন গাজায় ত্রাণ বিতরণের সব কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে অন্তত ১৬ জন নিহতের মরদেহ আনা হয়। একইদিনে উত্তরের আল-শিফা হাসপাতালে আরও ১৬ জন, গাজা শহরের আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ৫ জন এবং দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে আরও ৫ জনের মরদেহ পৌঁছায়।
ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণহানি
রাফাহ শহরের বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে শুক্রবার ভিড় করেছিলেন অসংখ্য ক্ষুধার্ত মানুষ। এ সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে সেখানে প্রাণ হারান আরও অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি। দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সব ত্রাণ কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে গত সপ্তাহ থেকে সহায়তা বিতরণ শুরু করে একটি নতুন সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ (GHF)। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত এ সংস্থাটি শুক্রবার জানায়, তারা সব ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ রাখবে।
GHF তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে জানায়, মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই সহায়তা কেন্দ্রে না আসার অনুরোধ করা হচ্ছে। কখন এসব কেন্দ্র আবার চালু হবে, সে বিষয়ে পরে জানানো হবে।
দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে গাজা
মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষই এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশ কঠোরভাবে রুদ্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কিছু সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
এই পরিস্থিতিতে ঈদের দিনও যখন মুসলিম বিশ্বে আনন্দ বিরাজ করছে, তখন গাজায় কেবল বেঁচে থাকার লড়াই চলছে। বন্ধ ত্রাণ কেন্দ্র, নিরাপত্তার অভাব, আর প্রতিদিন বেড়ে চলা হতাহতের তালিকা সেখানে ঈদের আনন্দকে রূপ দিয়েছে শোক আর আর্তনাদে।
সূত্র: আল জাজিরা।