
স্ত্রীর সঙ্গে একবার মজার এক বাজি ধরেছিলেন ব্রিটেনের ওয়েলসের বাসিন্দা ম্যাট জোনস। সেই বাজিই এখন হয়ে গেছে ভালোবাসা আর অঙ্গীকারের প্রতীক। তাই ৪২ বছর বয়সী ম্যাট সম্প্রতি ৭০ মাইল দীর্ঘ এক পথ হেঁটেছেন পিঠে ৩৭ কেজি ওজনের একটি ফ্রিজ নিয়ে।
এ কাজের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন প্রয়াত স্ত্রী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা হলো, অন্যদিকে একটি শিশু হাসপাতালের জন্য ৫০ হাজারেরও বেশি পাউন্ডের একটি তহবিল সংগ্রহ করেছেন ম্যাট।
বৃহস্পতিবার (৫ই জুন) দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর কোমরে অস্ত্রোপচার হয় ম্যাটের। সেরে ওঠার দিনগুলোতে তাকে নিয়ে স্ত্রী ভিক্টোরিয়া মজা করে বলেছিলেন—তার ‘পাগল’ স্বামী নিশ্চয়ই ফ্রিজ নিয়ে পাহাড়ি পথে ৩৫ মাইল হাঁটার পরিকল্পনা করছেন। সাবেক রয়্যাল মেরিন ম্যাট তৎক্ষণাৎ জবাব দেন—তিনি ওই ৩৫ মাইল পথের দ্বিগুণ হেঁটে দেখাবেন।
কিন্তু সেই হাস্যরস একসময় গভীর শোকের ছায়ায় ঢাকা পড়ে। কারণ, গত বড়দিনের ঠিক আগে ৪৩ বছর বয়সী ভিক্টোরিয়া অজানা এক হৃদ্রোগে হঠাৎ মারা যান। দীর্ঘ ২০ বছরের সঙ্গীকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েন ম্যাট। সেই মুহূর্তে তিনি ঠিক করেন—স্ত্রীর সঙ্গে হওয়া মজার কথাকেই তিনি বাস্তব করবেন। তার স্মৃতিকে অমর করে তুলবেন।
সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে ম্যাট শুরু করেন ‘ওয়ান বেট চ্যালেঞ্জ’। ৪ হাজার ৫০০ মিটার উঁচু ক্লুইডিয়ান পর্বতশ্রেণিতে ৭০ মাইল পথ পেরিয়ে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তিনি শেষ করেন যাত্রা। হাঁটার পুরো সময়টিই তার পিঠে ছিল একটি বিশাল ফ্রিজ।
এটি নিয়ে হাঁটার সময় ঝোড়ো বাতাস বারবারই তাকে কাত করে ফেলছিল। একপর্যায়ে ফ্রিজটি যেন নৌকার একটি পালের মতো বাতাসের দমকায় তাকে এদিকে-ওদিকে ঠেলে দিচ্ছিল।
জোনস জানান, পথে তিনি বারবার ভেঙে পড়েছেন। প্রথম দিন যাত্রার অগ্রগতি নিয়ে কিছুটা হতাশায় পড়েন। তবে অল্প ঘুমের পর পরদিন সকালে একটি রংধনু দেখা যাওয়ার মুহূর্তে তার মনে ফিরে আসে নতুন জোর। তিনি তার পথ শেষ করেন এবং নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা আগেই ল্যাঙ্গোলেন পৌঁছান শহরে।
কষ্টসাধ্য সুদীর্ঘ এ যাত্রায় ম্যাটকে সাহস দিয়েছে তার চার সন্তান—চার্লি (১৩), অ্যালিস্টার (১১), আরায়াহ (৮) ও ইভরাহ (৬)। পুরো যাত্রায় তারাও বাবার সঙ্গে ছিল এবং মাঝেমধ্যে তারাও বাবার সঙ্গে পথ হেঁটেছে।
ম্যাট বলেন, ‘শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা ছিল না এ চ্যালেঞ্জ। এটা ছিল আমার সন্তানদের দেওয়া এক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার বিষয় এবং ভিকির আত্মাকে জীবিত রাখার চেষ্টা।’
শেষে যোগ করেন, ‘আমার শরীর ভেঙে গেছে ঠিকই, কিন্তু আমি ঠিক হয়ে যাব। সম্ভবত আবারও কৃত্রিম কোমর প্রতিস্থাপন করা লাগতে পারে।’