
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজায় ইসরাইলি হামলায় বৃহস্পতিবার চার সাংবাদিকসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন, জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজা সিটির আল আহলি আরব হাসপাতালে সাংবাদিকদের ওপরে অপ্রত্যাশিত এক হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার জন্য তারা একটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করেছিলেন, সেখানেই হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
অ্যাংলিকান গির্জার মাধ্যমে পরিচালিত এ হাসপাতালটিতে এটি নিয়ে অষ্টমবারের মতো হামলা চালানো হল।
হামলায় তিনজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এক সময় হাসপাতালের ওই প্রাঙ্গণের যেখানে সুন্দর একটি বাগান ছিল সেখানে তার মৃতদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। অপর সাংবাদিকের পরে মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকও গুরুতর আহত হয়েছেন। আল আহলি হাসপাতালেই তার জরুরি অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরবরাহ না থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
হাসপাতালটিতে ইসরাইলি ড্রোন থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এ ক্ষেপণাস্ত্রের শার্পনেলের আঘাতে আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে অনেক তাঁরকাটা ও ধাতুর টুকরা থাকায় প্রাণঘাতী হয়। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার পর এসব শাপর্নেল শরীর ছিদ্র করে বের হয়ে যায়, ফলে ব্যাপক রক্তক্ষরণে আহতদের মৃত্যু হয়।
এ হামলার বিষয়ে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে ইসরাইল ঘোষণা করেছে, তারা গাজা থেকে ইসরাইলি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক দুই জিম্মির লাশ উদ্ধার করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরাইলে যে হামলা চালিয়েছিল ওই সময় গাদি হাগি ও তার স্ত্রী জুডি ওয়ানস্টাইন হাগি নিহত হন। হামাস তাদের মৃতদেহ গাজায় নিয়ে গিয়েছিল।
গাজায় এখনও হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে ৫৬ জন জিম্মি আছেন, তবে তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম জীবিত আছেন বলে বিশ্বাস ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের।
গাজায় ত্রাণ বিতরণে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত একটি বেসরকারি সংস্থা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তাদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ইসরাইলি বাহিনীর একাধিক প্রাণঘাতী গুলির ঘটনার পর বুধবার তারা তাদের ত্রাণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এ সংস্থাটি জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত কাজের জন্য তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঠিক কবে এগুলো আবার খুলবে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি সংস্থাটি।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাজা উপত্যকার খান ইউনিস এলাকার এক বাসিন্দা, যিনি নিরাপত্তা জনিত কারণে নাম প্রকাশ করেননি, বলেন—রাফাহ অঞ্চলে অবস্থিত জিএইচএফ -এর একটি বিতরণ কেন্দ্র বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্তও চালু হয়নি।
তবে, জিএইচএফ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।