Image description
 

পাক-ভারত সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা যেন থামছেই না।

একদিকে ভারত তাদের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে পাকিস্তান এই উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সামরিক ভাবমূর্তি ও নেতৃত্বকে আরও জোরদার করতে তৎপর।

তবে উভয় দেশের মধ্যে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে মিল রয়েছে—দুপক্ষই জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

 

এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব মন্তব্য শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং ভারতের সংঘাতমুখী মনোভাবেরই প্রকাশ। তারা অভিযোগ করেছে, শান্তির বদলে ভারত বেছে নিচ্ছে উত্তেজনা ও বৈরিতাকে।

 
 

সোমবার (২ জুন) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতীয় নেতারা ধারাবাহিকভাবে উসকানিমূলক ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। ডন পত্রিকার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৯ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাশ্মীর প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন—‘কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা তখনই সম্ভব, যখন পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর হস্তান্তর করবে’—তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এই মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকত আলি খান বলেন, ‘পাকিস্তানকে আঞ্চলিক অস্থিরতার উৎস হিসেবে দেখানোর চেষ্টা শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, বরং এটি বাস্তবতাবিরুদ্ধ।’

তিনি দাবি করেন, ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল ইতোমধ্যে সচেতন এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে।

শফকত আলি খান কাশ্মীর প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাশ্মীর এখনো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির পথে প্রধান বাধা। জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাব এবং কাশ্মীরি জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এর ন্যায়সংগত ও টেকসই সমাধান আবশ্যক।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তা থেকে কোনোভাবেই সরে আসবে না।’

ভারতের অবস্থানকে ‘অন্ধ জাতীয়তাবাদ ও বলপ্রয়োগের ব্যর্থ কৌশল’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘হুমকি দিয়ে কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।’

তার ভাষায়, ‘পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক সংলাপের পক্ষে। তবে একইসঙ্গে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায়ও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই অঞ্চলে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন পরিপক্বতা, সংযম এবং সংঘাতের মূল কারণগুলোর আন্তরিক সমাধান।’

পাকিস্তান বলছে, শুধু শক্তির প্রদর্শন বা রাজনৈতিক লাভের চিন্তা না করে ভারতকে শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথে ফিরতে হবে—এটাই বর্তমান বাস্তবতা।