
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ। তবে এখন পর্যন্ত মহাসড়কে কোন যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তবে বুধবার সকাল থেকে এই মহাসড়কের কিছু কিছু স্থানে গাড়ির লম্বা সারি দেখা যায়। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচলের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক ব্যক্তিগত যান চলাচল করছে। অনেকে আবার বাসে সিট না পেয়ে ট্রাক বা পিকআপে বাড়ি ফিরছে নাড়ির টানে। সড়কপথে ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
এদিকে ভোরে যমুনা সেতু সংযোগ সড়কে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হওয়ায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো সরানোর পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
সরজমিনে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ঘরমুখো মানুষ। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তরের ঘরমুখো মানুষ বলছেন, ৩০০ টাকার ভাড়া ৫ থেকে ৬শ" টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন যাত্রীরা।
মহাসড়কে গণপরিবহনের চেয়ে ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে খোলা ট্রাকে করে গন্তব্য পৌঁছাতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকেই গরুবাহী ফিরতি ট্রাকেও বাড়ি ফিরছেন।
দুপুরে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক মহাসড়ক পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি বলেন, ঘরমুখো মানুষ যাতে নিরাপদে বাড়ি যেতে পারেন সেজন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইলকোর্ট বসানো হয়েছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষ যাতে বাড়তি ভাড়া না নিতে পারে সেজন্য অভিযান চলমান রয়েছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বারচালকরা জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে খালি গাড়ি নিয়ে ঢাকায় নিয়ে যেতে হয়। তাই কিছুটা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে।
যমুনা সেতুর পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ আহমেদ বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই। মহাসড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু থেকে দুই কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এর বিপরীতে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল যানবাহন পারাপারের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই যানজট। যানজট নিরসনে যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর উপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই জন্য দুইটি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় আছে।সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে, যেন মানুষ নিবিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে। তবে যানজট নেই। মানুষ যেন নিবিঘ্নে গন্তব্য পৌঁছাতে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে ঈদে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে বরাবরের মতো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ছয় শতাধিক পুলিশ মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে। যানজটের পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছে পুলিশ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মানুষ এবার নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরবে বলে আশা করছেন পুলিশ সুপার।