Image description

গলা ও মুখের ক্যানসার চিকিৎসায় গত দুই দশকে এত বড় অগ্রগতি আর দেখা যায়নি। বিশ্বজুড়ে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোড়ন তোলা এ আবিষ্কার হলো এক ধরনের ইমিউনোথেরাপি ওষুধ। ওষুধটির নাম পেমব্রোলিজুম্যাব। এ ওষুধ ক্যানসার রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট এক ধরনের প্রোটিনকে লক্ষ্য করে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় অংশ নেয় ২৪টি দেশের ৭০০-এর বেশি রোগী। এর মধ্যে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধটি ক্যানসারকে গড়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত থামিয়ে রাখতে পারে। প্রচলিত চিকিৎসায় এটি ছিল মাত্র ৩০ মাস। গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয় আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি’র বার্ষিক সম্মেলনে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যানসার সম্মেলন হিসেবে পরিচিত এ আয়োজনে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, পেমব্রোলিজুম্যাব মূলত গলা ও মুখের এমন রোগীদের জন্য কার্যকর, যাদের শরীরে পিডি-এলওয়ান নামের একটি ইমিউন মার্কারের উপস্থিতি বেশি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য রোগীর ক্ষেত্রেও এ ওষুধ কার্যকরভাবে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। এতদিন গলা ও মুখের ক্যানসার চিকিৎসায় মূল ভরসা ছিল অস্ত্রোপচারের পর রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি। সেই চিরচেনা ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছে এ নতুন পদ্ধতি।

গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন। তিনি বলেন, দুই দশকে এ রোগের চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু এই গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছে, ইমিউনোথেরাপি এ দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে।

তিনি আরও জানান, যখন ক্যানসার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এ ওষুধ সেই বিস্তার থামিয়ে দিতে পারছে, ফলে রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া লরা মার্সটন নামের ৪৫ বছর বয়সী এক রোগী জানান, ২০১৯ সালে তিনি স্টেজ-৪ জিভের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি পেমব্রোলিজুম্যাব ট্রায়ালে অংশ নেন।

তিনি বলেছেন, আমি অবাক হয়ে ভাবি, ছয় বছর পরেও আমি জীবিত আছি! এই চিকিৎসা আমাকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চের প্রধান নির্বাহী প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান হেলিন বলেন, ইমিউনোথেরাপি চিকিৎসায় বারবার নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। রোগমুক্ত থাকার সময় দ্বিগুণ হওয়া মানে অনেক বড় অর্জন। এখনও অনেক রোগীর ক্যানসার ফিরে আসেনি—এটাই সবচেয়ে আশার কথা।