
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর ওপর মাত্র চার মাস আগে নির্মিত একটি বাঁধ ভেঙে পড়ে। সেটা আবারও নির্মাণের পর মঙ্গলবার (২০ মে) ভোর রাতে নদীর প্রবল স্রোতে প্রায় ৩০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত ঐ বাঁধের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে। এতে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার (২১ মে) শিলিগুঁড়ির উত্তরবঙ্গের মুখ্য প্রশাসনিক কার্যালয় উত্তরকন্যার অডিটোরিয়ামে এক প্রশাসনিক বৈঠকে আত্রেয়ী নদীর সেই বাঁধ ভেঙে পড়া নিয়ে নাম না করে বাংলাদেশ ও চীনক দোষারোপ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, আমাদের কাজটায় একটা সমস্যা হয়েছে, তার কারণ আমাদের একটি সীমান্তবর্তী দেশ রয়েছে, তার নাম বলছি না, তারা দুটো দেশ মিলে একটা বাঁধ তৈরি করেছিল, আমরা সেটা বারে বারে ভারত সরকারকে জানিয়েছি। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুর, বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ আত্রাই নদীর পানি পায় না। ফলে আমরা যেটুকু কাজ করতে যাচ্ছি তা খুবই লিমিটেড। তা সত্ত্বেও যেটা ভেঙেছে তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমকে নিশানা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘সিকিমে ১৪টা হাইড্রেল পাওয়ার করা হয়েছে, ফলে ওখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না, আর তার ফলে সব পানি এসে পড়ছে বাংলার বুকে। যে যার নিজের নিয়ে আছে। তারা একবার তো ভাববে। ওদের আমরা ভালোবাসি। আমাদের কত পর্যটক ওখানে যায়। আপনারা এতগুলো বিদ্যুৎ প্রকল্প করলেন সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার কেন অনুমতি দিল?
এরপরই মমতার হুঁশিয়ারি, কেউ যদি মনে করে যে অপরের উপরে নিঃশ্বাস ফেলবে, বাংলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে, তবে মনে রাখতে হবে তারা যেন নিজের রাজ্যকে সামলায়। নিঃশ্বাস আমরাও ফেলতে পারি। আমরা মনে করি প্রত্যেকটা জিনিসের সীমাবদ্ধতা আছে, কারোরই লক্ষণ রেখা অতিক্রম করা উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, আত্রাই নদী বাংলাদেশ হয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর দিয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদীর তীব্র ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষায় ২০২২ সালে বালুরঘাটের চকভৃগুতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২০২৪ সালে তার কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই প্রথমবারের মতো সেই বাঁধের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়ে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে বালির বস্তা ফেলে সেটি মেরামতির কাজ চলছিল। কিন্তু এর চার মাসের মধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে পানির তোড়ে বাঁধের প্রায় ৪০ ফুট অংশ ধসে পড়ে, যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়।