Image description

পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে ‘ফিল্ড মার্শাল’ হলো সর্বোচ্চ সামরিক পদ, যা কেবল অসাধারণ সামরিক অবদান বা যুদ্ধজয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়। ১৯৫৯ সালে প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান নিজেকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন, যা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ছিল।

এর ৬৫ বছর পর, মঙ্গলবার (২০ মে) এই পদ দ্বিতীয়বারের মতো প্রদান করা হলো সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনীরকে। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতে তার কৌশলগত নেতৃত্ব ও সফল প্রতিরোধমূলক অভিযান—বিশেষ করে অপারেশন বুনয়ানুম  মারসুস এবং মার্কা-এ-হক-এর মাধ্যমে—জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সরকার তাকে ফিল্ড মার্শাল উপাধিতে ভূষিত করে।

এই পদ সেনাবাহিনীর রুটিন পদোন্নতির অংশ নয়। এটি একটি সম্মানসূচক পদ, যা শুধু বিশেষ সামরিক সাফল্য ও জাতীয় নিরাপত্তায় অসামান্য অবদান রাখার জন্যই প্রদান করা হয়। এই পদটি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিসভার সম্মতিক্রমে প্রদান করা হয়।

জেনারেল অসীম মুনীরের পদোন্নতি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ব্যাপক সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করেছে।  গত ২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি আত্মঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হলে পরিস্থিতি চরমে ওঠে।  এরপর ভারতের পাল্টা বিমান হামলার জবাবে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং ভারতের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়।

মন্ত্রিসভা জেনারেল মুনীরের কৌশলগত দূরদৃষ্টি ও সাহসী নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, এই পদোন্নতি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি। এই পদ গ্রহণ করে মুনীর বলেন, এই সম্মান আমার একার নয়, এটি পুরো জাতির, সেনাবাহিনীর, এবং শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উৎসর্গীকৃত।

তিনি বলেন, এই র‍্যাঙ্ক জাতির কাছে আমার আমানত।  লক্ষ লক্ষ ‘অসীম’ এই দেশের জন্য আত্মত্যাগে প্রস্তুত। মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দেয়, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির আহমেদ বাবর সিধুর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে এবং যেসব সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।

ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ফিল্ড মার্শাল পদ

পাকিস্তানে এর আগে মাত্র একবার এই পদ প্রদান করা হয়েছিল—১৯৫৯ সালে, যখন জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খান নিজেই নিজেকে ফিল্ড মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেন। তবে সেটি ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ। জেনারেল মুনীরের পদোন্নতি তাতে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ এটি একটি আনুষ্ঠানিক, সাংবিধানিক এবং সামরিক সাফল্যের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ফিল্ড মার্শাল পদ

বিশ্বব্যাপী ফিল্ড মার্শাল পদটি একটি সম্মানজনক র‍্যাঙ্ক, যা সাধারণত যুদ্ধকালীন বীরত্ব ও কৌশলগত নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয়।  যুক্তরাজ্যে এই পদটি আজীবনের জন্য প্রদান করা হয় এবং অনেক সময় কেবল প্রথাগত বা কূটনৈতিক দায়িত্বে ব্যবহৃত হয়। ভারতের সাম ম্যানেকশ ও কে.এম. কারিয়াপ্পা এই র‍্যাঙ্ক পেয়েছেন।  যুক্তরাষ্ট্রে এই পদ ‘জেনারেল অব দ্য আর্মি’ নামে পরিচিত, যা ডুইট আইজেনহাওয়ারের মতো নেতারা পেয়েছিলেন।

আধুনিক যুগে অনেক দেশ এই পদ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে, তবে যেসব দেশে এখনও আছে, সেখানে এটি একটি কূটনৈতিক এবং প্রতীকী মর্যাদার প্রতিফলন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জেনারেল অসীম মুনীরের ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ও শক্তিশালী বার্তা এটি শুধু এক ব্যক্তির নয়, একটি জাতির আত্মবিশ্বাস, প্রতিরোধ ও ঐক্যের প্রতীক মনে করছেন বিশ্লেষকরা।