
পাকিস্তানে চালানো ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি এই বিতর্কিত অপারেশন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চেয়েছেন। সোমবার সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাহুল এক্সে (সাবেক টুইটার) জয়শঙ্করের একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে বলেন, ‘পাকিস্তানকে আগে থেকেই অভিযানের খবর জানানো হয়েছিল। এর ফলে ভারত কয়টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে, সে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। এটি একটি অপরাধ। আর জয়শঙ্করের নীরবতাই প্রমাণ করে, তিনি কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করছেন।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এমন দায়িত্বহীন মন্তব্য অনভিপ্রেত।
এদিকে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে পানি ইস্যুতে সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাবাহিনীর গণসংযোগ শাখার (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, কেউ যেন ২৪ কোটি পাকিস্তানির জন্য পানি বন্ধ করার সাহস না করে। কেউ এমন করলে বিশ্ব তার ভয়ংকর পরিণতি দেখবে এবং সে যুদ্ধ বছরের পর বছর চলবে।
উত্তেজনার মাঝেই চীন সফরে গেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এই সফরে তিনি চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের পরবর্তী কৌশল নিয়ে আলোচনা করবেন।
এর আগে কাশ্মীর হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে চীন সরাসরি পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুই দেশের ‘আয়রন ব্রাদারহুড’ সম্পর্ককে নতুন করে গুরুত্ব দেয়।
এদিকে পাকিস্তানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ সাধারণ মানুষের সামনে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে এক প্রদর্শনীতে তারা দাবি করেছে, ৮ মে পাকিস্তান থেকে উৎক্ষেপিত একাধিক চীনা ও তুর্কি ড্রোন, এ-১০০ রকেট এবং পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে।
অপারেশন সিঁদুরকে ঘিরে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিস্থিতি- দুই মিলে অঞ্চলজুড়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হলেও সরকার পক্ষ এখনো দৃঢ়ভাবে সেই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করছে।
অন্যদিকে চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা এবং যুদ্ধের হুঁশিয়ারি- দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কেও ভারতের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।