Image description

পাকিস্তান শান্তি চায়। কিন্তু কখনো ভারতের আধিপত্যের কাছে মাথানত করবে না। ভারতকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ভারত যদি পানি আটকে রাখে তাহলে তাদেরকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। একই সঙ্গে বলেন, প্রকৃত সত্য হলো ভারত কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নয়। আর পাকিস্তানও আফগানিস্তান নয়। আবার ভারত নিজে ইসরাইল নয়। পাকিস্তানও ফিলিস্তিন নয়। পাকিস্তানের ভিতরে যেসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আছে তার মদত দিচ্ছে ভারত। 

 

আহমেদ শরীফ চৌধুরী তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে এসব কথা বলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ। 

তিনি ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ভারতের আধিপত্যের কাছে আমরা কখনো মাথানত করবো না। এটা তারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তির জন্য তা তত মঙ্গলজনক হবে। রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের অপ্রমানিত দাবির পর আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান সফল অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস পরিচালনা করে । এর মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একে ভারতের আগ্রাসনের সুনির্দিষ্ট ও যথোপযুক্ত জবাব বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

তবে দিল্লির দাবি তারা সন্ত্রাসীদেরকে টার্গেট করেছে।  অভিযানে তিনটি রাফালেসহ ৬টি যুদ্ধবিমান ও কয়েকডজন ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করে। এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে কমপক্ষে ৮৭ ঘন্টা সংঘর্ষ চলার পর ১০ই মে আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। তারপর থেকে চলছে দুই পক্ষের বাকযুদ্ধ। 

পাকিস্তান আইএসপিআরের তথ্যমতে, সামরিক সংঘর্ষের সময় ভারতের হামলায় পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ১৩ সদস্য ও ৪০ বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোহ ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ পর্যটক। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। পাকিস্তান বলছে, কোনো প্রমাণ ছাড়া এই দায় চাপাচ্ছে ভারত। এসব নিয়ে আনাদোলুর সঙ্গে কথা বলেন জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে দায়ী করার স্বপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। নয়া দিল্লির সরকার ওই ঘটনাকে সন্ত্রাসের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। 

তিনি বলেন, সন্ত্রাস, চরমপন্থা ও ঘৃণা হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দেশটিতে মুসলিম ও শিখসহ বিভিন্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালাচ্ছে নয়া দিল্লি। এতে ক্ষোভ, উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে। তিনি বলেন, পাকিস্তানে যেসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম আছে তার সবটাতে ভারতের সমর্থন ও উৎসাহ আছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর সঙ্গে ভারতের যোগসূত্র আছে এ বিষয়ে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ আছে। তারা এসব তথ্যপ্রমাণ জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে পাঠিয়েছেন বলে জানান। 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, দেশের নিরপরাধ শিশু ও নারীদের হত্যার শুধু প্রতিশোধ নেয়া থেকে আমাদেরকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে, আমরা এমন কোনো দেশ বা রাষ্ট্র নই, যাদেরকে দমিয়ে রাখা যায় অথবা প্রতিরোধ করা যায়। আগ্রাসন ও অত্যাচারের কাছে আমরা কখনো মাথানত করি না। করবোও না। 

তিনি বলেন, পাকিস্তান শান্তি চায়। শান্তির পক্ষে। তবে যদি একই রকম হামলা হয়, তাহলে পাকিস্তান জবাব দেবে। তার ভাষায়- ভারত যদি আমাদেরকে উস্কানি দেয়, আক্রমণ করে তাহলে আমাদের জবাব হবে ত্বরিত ও কঠোর। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তিনি জানান ১০ই মে যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, মেনে চলবে। কিন্তু ভারতীয় সেনারা কোনো উস্কানি দিলে তার জবাব দেয়া হবে। 

সিন্ধু নদের পানি চুক্তি সম্পর্কে তিনি ভারতকে সতর্ক করে দেন। বলেন, যদি পাকিস্তানের পানি আটকে দেয়া হয়, তাহলে ভারতকে দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি ভোগ করতে হবে। তার ভাষায়- আমি আশা করি সময় আসেনি। বিশ্ব এমন এক অ্যাকশন দেখবে যার পরিণতিতে আমরা বছরের পর বছর, দশক ধরে যুদ্ধ করবো। কেউই পাস্তিানের পানি আটকে রাখার সাহস দেখাতে পারে না। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সেনাবাহিনী। আমরা যে প্রতিশ্রুতি করেছি, তা রক্ষা করবো। আমরা রাজনৈতিক সরকারের নির্দেশ অনুসরণ করবো।