
ময়দানের যুদ্ধ আপাতত শেষ। এখন নতুন করে কূটনৈতিক লড়াই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পেহেলগাম সন্ত্রাস ও তার পর ভারতের অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে প্রচারণার জন্য ভারত সরকার সর্বদলীয় একটি প্রতিনিধি দলকে কূটনৈতিক মিশনে পাঠাচ্ছে। এর প্রধান করা হয়েছে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরকে। তারা দেশে দেশে কূটনৈতিক মিশনে গিয়ে এসব বিষয় এবং সন্ত্রাসের বিষয়ে প্রচারণা চালাবেন। তারা সমস্ত ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের জাতীয় ঐকমত্য এবং দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। পাকিস্তানও বসে নেই। তারাও একই রকম প্রচারণায় নামছে। সম্প্রতি ভারত তাদের দেশে যে সামরিক আগ্রাসন চালায় তার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিজেদের অবস্থান বিশ্বের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই মিশনের নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিলাওয়াল এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি এক্সে এক পোস্টে জানান, শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে অনুরোধ করেন, আমি যেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরার দায়িত্ব গ্রহণ করি। আমি এই দায়িত্বকে সম্মান জানিয়ে গ্রহণ করছি এবং এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে পাকিস্তানের সেবা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত যে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্মোচনের লক্ষ্যে একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে এবং এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. মুসাদিক মালিক, খুররম দস্তগীর খান, শেরি রেহমান, প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানী খার, সিনেটর ফয়সাল সাবজওয়ারী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত জালিল আব্বাস জিলানী। এই প্রতিনিধি দল বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রাসেলস সফর করবেন এবং রাশিয়াতেও যেতে পারেন।
গত মাসে ভারত শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই আক্রমণ শুরু করে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই পেহেলগাম হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এতে একযোগে ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনায় ‘সুনির্দিষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ’ হামলা চালায় পাকিস্তান। পাকিস্তান দাবি করেছে, এ অভিযানে তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে তিনটি ছিল রাফালে জেট এবং ডজনখানেক ড্রোন। এই সংঘাতে মোট ৫৩ জন পাকিস্তানি শহীদ হন। তাদের মধ্যে ১৩ জন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং ৪০ জন সাধারণ নাগরিক।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিনিধি দল বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি রক্ষায় পাকিস্তানের প্রচেষ্টা তুলে ধরবেন এবং একই সঙ্গে ভারতের উসকানিমূলক কার্যক্রম ও প্রচারণা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, এই সংসদীয় প্রতিনিধি দল শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, ব্রাসেলস এবং রাশিয়ায় সফর করবেন এবং পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরবেন।