Image description

রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় মস্কোর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও। তিনি আশঙ্কা করছেন, হয়তো রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত করছে।

গত তিন বছরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও উভয় পক্ষ ১ হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে, তবুও এ আলোচনার ফল নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সচিব অব স্টেট) রুবিও বলেন, “রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে এখনো আমি সতর্ক। হয়তো তারা আমাদের ধাপে ধাপে ভুল পথে চালনা করছে।” সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে রোববার প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়ে তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। “এই আলোচনাগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল না,” বলেন রুবিও, “তবে প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কি কেবল আমাদের সময়ক্ষেপণের ফাঁদে ফেলছে? সেটাই এখন আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।”

ইস্তাম্বুল বৈঠক প্রায় দুই ঘণ্টার মধ্যেই কোনো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সরাসরি সাক্ষাতের প্রস্তাব দিলেও, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিম্নপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পাঠান।

রুবিও বলেন, “একদিকে আমরা শান্তি চাই, এই রক্তক্ষয়ী, ব্যয়বহুল এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান চাই। অন্যদিকে আমাদের হাতে সময়ও নেই। বিশ্বের অন্যত্রও অনেক বড় সংকট রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, আলোচনায় অগ্রগতি নির্ভর করছে ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠকের ওপর। “প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) এটা করতে চান, যত দ্রুত সম্ভব করতে চান। তবে এখনো স্থান ও সময় চূড়ান্ত হয়নি,” বলেন রুবিও। তিনি জানান, শান্তি আলোচনার জন্য ভ্যাটিকান একটি ‘আরামদায়ক ও গ্রহণযোগ্য’ স্থান হতে পারে।

এই বক্তব্য আসে সোমবারের আগে, যেদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানা গেছে। ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “আশা করি এটা একটি ফলপ্রসূ দিন হবে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, এবং এই ভয়াবহ যুদ্ধ,যেটা কখনোই শুরু হওয়ার কথা ছিল না,শেষ হবে।”

তবে ইউক্রেনে সাম্প্রতিক রুশ হামলা এই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। শনিবার ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে একটি বেসামরিক বাসে রুশ ড্রোন হামলায় ৯ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানায় ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই হামলাকে “সোজাসুজি বেসামরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা” বলে নিন্দা জানান।

যদিও জেলেনস্কি ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন, তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মার্কিন নীতির ধারাবাহিকতা নিয়ে সন্দিহান। ইউক্রেনের সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ওলেক্সান্দার মেরেজকো নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “এ রকম অস্থিরতা, অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত আর কৌশলের অভাব যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশল রাশিয়াকে পুরস্কৃত করছে এবং ইউক্রেনকে চাপে ফেলছে। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক মন্তব্যে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মিক রায়ান বলেন, “পুতিনের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনের গণতন্ত্র ও সংস্কৃতিকে নিঃশেষ করে তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নেওয়া।”

এদিকে রোমে নতুন পোপ লিও চতুর্দশের উদ্বোধনী প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন মার্কো রুবিও। সেখানে তিনি জানান, পোপ শান্তি আলোচনা আয়োজনে “একটি মহৎ প্রস্তাব” দিয়েছেন। নিজের প্রথম আশীর্বাদ বার্তায় পোপ লিও সব পক্ষকে “সত্যিকারের, ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার” আহ্বান জানান।

 সূত্র:https://tinyurl.com/y6hd6s27