
কাশ্মীর ইস্যুকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ বলে মনে করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ইসহাক দার বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আমরা এই ইস্যুটি বয়ে বেড়াচ্ছি। শুধু ভারত কিংবা পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ এই কাশ্মীর ইস্যু। এটি এখন আর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং একটি স্বীকৃত বৈশ্বিক সংকটে রূপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া এই ইস্যুর সমাধান পাকিস্তানের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। পাকিস্তান এই ইস্যু সমাধানে আন্তরিকভাবে আগ্রহী দাবি করে উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একটি দ্বিপক্ষীয় ইস্যু।
আপনি যেমন এক হাতে তালি বাজাতে পারবেন না, তেমনি আমরাও এককভাবে এই সংকট সমাধান করতে পারব না। তবে যত শিগগির সম্ভব এই ইস্যুটির সমাধান প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অনেক বিলম্ব হয়েছে এবং এখন কেউই আর বিলম্ব চায় না। পাকিস্তান আঞ্চলিক সহিংসায় বা উদ্বেগ বাড়াতে মোটেই আগ্রহী নয়। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনার ফলে পাকিস্তানের ওপর বড় কোনো আর্থিক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব। সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান রাজস্ব ব্যবস্থার মধ্যেই এটি সামাল দেওয়া সম্ভব। নতুন কোনো অর্থনৈতিক মূল্যায়নের প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা খুব দ্রুতই অগ্রসর হবে এবং পাকিস্তান আরও উচ্চমানের তুলা ও সয়াবিন আমদানি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী জবাবে গত ৭ মে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযানের তিন দিন পর ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ও তৎপরতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সংঘাতে ১১ সেনা নিহত ও ৭৮ সেনা আহত হয়েছেন। পাশাপাশি, ভারতীয় আগ্রাসনে ১৫ শিশু ও সাত নারীসহ মোট ৪০ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ১২১ জন আহত হয়েছেন। আইএসপিআরের বিবৃতিতে নিহত সেনা সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ছয় ও বিমানবাহিনীর পাঁচ সদস্য রয়েছেন।
এদিকে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আটটি শহরের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে ভারতের উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও ইনডিগো। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই গতকাল মঙ্গলবার জম্মু, লেহ, যোধপুর, অমৃতসর, ভুজ, জামনগর, চণ্ডীগড় ও রাজকোটের ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে। আর ইনডিগো জানিয়েছে, জম্মু, অমৃতসর, চণ্ডীগড়, লেহ, শ্রীনগর ও রাজকোটের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে এসব বিমানবন্দর চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যদিও এরই মধ্যে কয়েকবার সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ভারত, কিন্তু বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি এখনো। তবে সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনী অভিযোগ করে বলেছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সাম্বা সেক্টরে তারা একটি সন্দেহজনক ড্রোন দেখতে পেয়েছে।
সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা নির্মূল করতে জম্মু-কাশ্মীরে সেনা অভিযান পরিচালনা করছে ভারত। মঙ্গলবার ‘অপারেশন কিলার’ নামের এ অভিযানে জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়েছে, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলার শুকাল কেল্লের এলাকায় অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। অভিযানে সেনা সদস্যদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়েছে। সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সে বার্তায়।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর এটি ছিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার শাখা এই টিআরএফ।