
ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে লক্ষ্যস্থল করে একটি হাসপাতালে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে ইসরায়েল। এতে সিনওয়ারের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা পরিষ্কার হয়নি।
ইসরায়েলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এ হামলার বিষয়ে জ্ঞাত দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালে হামলাটি চালানো হয়।
গত অক্টোবরে ইসরায়েলি বাহিনী ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর থেকে তার ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের আসল নেতা হয়ে উঠেছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউরোপীয় হাসপাতালে হামলায় ছয় ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, হাসপাতালটির নিচে ভূগর্ভস্থ একটি অবকাঠামোতে ‘হামাসের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার’ ছিল, সেখানে ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্যস্থল করেছে তারা।
কাকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে আইডিএফ তা জানায়নি।
খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ডাঃ সালেহ আল হামসের ভাষ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের উঠানে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে কিছু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। ঘটনাটিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
হামলার সময় মেডিকেল টিমগুলো রোগীদের হাসপাতালের নিরাপদ পাশে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।

ইসরায়েলের হামলার পর গাজার খান ইউনিসের ইউরোপীয় হাসপাতাল। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
সিএনএন জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে আসা ভিডিওতে ধোঁয়ার বিশাল উঁচু স্তম্ভ দেখা গেছে, এতে ধারণা করা হচ্ছে এটি গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় হওয়া সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর একটি।
সিনওয়ারকে নিয়ে ইসরায়েলের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “এককভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধই তার দপ্তারিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে, প্রকাশিত তথ্য নিশ্চিত বা অস্বীকার করার জন্য অনুমেদিত কর্তৃপক্ষ।”
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে তার ভাই ইয়াহিয়ার মতোই কট্টরপন্থি বলে বিবেচনা করে। কিন্তু মোহাম্মদ সামরিক দিক থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আইডিএফের তথ্য অনুযায়ী, মোহাম্মদ ২০১৬ পর্যন্ত খান ইউনিস ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। তিনিও তার ভাই ইয়াহিয়ার মতো ইসরায়েলে চালানো ৭ অক্টোবর হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী বলে বিশ্বাস ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় হামাসের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তিনিও লুকিয়ে ছিলেন। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে আইডিএফ একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছিল, মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজার একটি টানেল দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে আইডিএফ জানায়, তারা খান ইউনিসের পশ্চিমাংশে তার দপ্তর খুঁজে পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শুভেচ্ছার নিদর্শনে হিসেবে হামাস মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক এডেন আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার একদিন পর মোহাম্মদ সিনওয়ারকে লক্ষ্যস্থল করল ইসরায়েল। এই একজন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য যে চুক্তি হয়েছে তা ইসরায়েলকে পাশে ঠেলে দিয়েছে, কারণ হামাস ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।