Image description
 

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত পাকিস্তানের সমঝোতার পর দুই দেশেই জনমনে স্বস্তি ফিরছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোয় ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ, খুলছে দোকানপাট। তবে পাল্টাপাল্টি হামলা থামলেও থামেনি দুই দেশের মধ্যকার বাকযুদ্ধ। এছাড়া সংঘাত নিয়ে চলছে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি দাবিও। খবর ডয়চে ভেলে। 

রোববার ভারতীয় সেনার ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস লেফটোন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশনস এয়ার মার্শাল একে ভারতী এবং নৌবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ নেভাল অপারেশনস ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের তথ্য দেন।

তারা দাবি করেছেন, অপারেশন সিঁদুরের ফলে ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা মারা গেছেন। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। চাকলালা, রফিকি, সরগোদা, জাকোকাবাদ, ভুলারির মতো অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করা হয়েছে। ভারতের নৌবাহিনী করাচিতে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। তারা সেইমতো পজিশন নিয়েছিল।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানিয়েছেন, নয়টি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা করা হয়েছিল। তার ফলে ইউসূফ আজহার, আব্দুল মালিক রউফ এবং মুদস্সর আহমেদসহ একশর বেশি জঙ্গির মারা গেছে। মৃত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিও রয়েছে।

 

তারা জানিয়েছেন, ভারতের লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, মুজাফফরাবাদের জঙ্গি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সেগুলোকে বিধ্বস্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে -তে ভারতের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা করার চেষ্টা করে। শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ড্রোন, পাইলটহীন বিমান দিয়ে হামলা করতে চেয়েছিল। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেগুলোর মোকাবিলা করে এবং তা ব্যর্থ করে দেয়। পাকিস্তানের বেশ কিছু যুদ্ধবিমান ভারতীয় সীমান্তে ঢোকার আগে গুলি করে নামানো হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

ভারতের দাবি, পাকিস্তান এই আক্রমণ করেছিল বলেই ভারতকে পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে হয়েছে। নাহলে, ভারতের আক্রমণ জঙ্গি ঘাঁটি নষ্ট করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা জানিয়েছেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে ভারত এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে, তাদের আগ্রাসী মনোভাব কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।

ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ বলেছেন, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ, রণতরী, বিমানসহ সমস্ত বিভাগকে সমুদ্রে মোতায়েন করা হয়েছিল। নৌবাহিনী ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে আরব সাগরে বেশ কিছু জায়গায় কৌশলগত অবস্থান নেয়। তারা করাচিসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করার জায়গায় ছিল। পাকিস্তান পুরোপুরি রক্ষণাত্মক অবস্থান নেয়।

সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, পাঁচজন ভারতীয় সেনা সংঘাতে মারা গেছেন।

ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বস হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে, তারা বলেছেন, লড়াইয়ে কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে। যেহেতু সংঘর্ষে এখনো সম্পূর্ণভাবে থামেনি, তাই এই বিষয়ে এখনই তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে সব পাইলট নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের দাবি

পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল পাবলিক রিলেশনস এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ, নৌবাহিনীর ন্যাভাল স্টাফ(অপারেশন) ডেপুটি চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রাব নওয়াজ ওবং পাকিস্তান সেনার প্রধান মুখপাত্র লেফটোন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

তাদের দাবি, ভারত পাকিস্তানের আকাশসীমা লংঘন করার পর তারা অপারেশন ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করেন। ভারতের ২৬টি সামরিক টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা করা হয়। এই টার্গেটের মধ্যে ছিল সুরাতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, ভাতিন্দা, বারনালা, হালওয়ারা, অবন্তীপুর, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, আম্বালা, উধমপুর ও পাঠানকোট। প্রতিটি জায়গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তাদের দাবি, ব্রক্ষ্মস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারত পাকিস্তানে হামলা করেছিল। সেই ফেসিলিটি ধ্বংস করা হয়েছে।

পাকিস্তানের সেনাকর্তাদের দাবি, তাদের নৌবাহিনী মুম্বাইয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।

তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির অনুরোধ করেনি। কেউ যদি যুদ্ধে নামে তাহলে দুই পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নামবে। তাই পাকিস্তান খুবই সংযত ও পরিণতভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে।