Image description

অন্তর্বর্তী সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ‘সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে’ এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টু।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, এই দেশে অনেক বিদেশীর আগমন ঘটেছে, সন্দেহভাজন বিদেশীদের আগমন ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন মিশন নিয়ে আসতেছে। আজকে ফেসবুকে আপনারা সার্চ দিলে পাবেন এক ভদ্রলোক বলছিলেন, এখন বলতে পারছি না। তবে আমরা ধারণা এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই অপকর্মগুলো করছে। এই মুহুর্তে আমি এই সরকারকে অন্তত আমি আমার কথা বলছি, নিরপেক্ষ ভাবতে পারছি না। তারা কোনো উদ্দেশ্যে কারো পারপাসন সার্ভ করছে। এই সরকার কোনো অবস্থাতেই গণবান্ধব কিংবা দেশপ্রেমিক সরকার নয়। আমি পরিষ্কার ভাষায় এটা বলতে চাই- আমার দেশ, দেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেনো?

তিনি বলেন, আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে এই সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা দেশপ্রেমিক সরকার। আমার প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব পাওয়ার পরে আমাকে যে শাস্তি যেখান থেকে দেয়া হয় সেটা আমি মাথা পেতে নেবো। আমি আমার কথা বললাম, আমি জানি- এটা যথাযথ ফোরাম নয়, হয়ত আরও বড় কোনো জায়গায় বলা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি আমার মনের ক্ষোভ ধরে রাখতে পারিনি, আমি আপনাদের সামনে প্রকাশ করলাম। আমার কথাটা একটু আপনারা মনে ধারণ করবেন এবং দেশবাসীর কাছে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এখন কিন্তু আমরা খুব ভালো অবস্থানে নাই।

দেশে সার্কাস হচ্ছে মন্তব্য করে আব্বাস বলেন, আজকে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি রাজনৈতিক অবস্থানে, আমরা কয়েকদিন যাবৎ দেখতে পারছি, বাংলাদেশে একটা সার্কাস হচ্ছে, নাটক জাতীয় কিছু একটা হচ্ছে, আমার কাছে মনে হচ্ছে আরকি। আমি আবার কথাগুলো আটকিয়ে রাখতে পারি না, আমার একটা বাজে অভ্যাস। আমার কাছে সাধারণ কাছে নাটক-ফাটক মনে হচ্ছে। আগে আমরা দেখতাম যে, শেখ হাসিনা কিছু করার আগে কোথাও একটা অপকর্ম ঘটাতো, আমরা বুঝতাম সে কিছু একটা ঘটাবে। একদিকে আমাদের দৃষ্টি নিয়ে যেতো আর কাজ এদিক দিয়ে করতো।

তিনি বলেন, দেখেন হামিদ সাহেব (সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ) চলে গেলেন কি সুন্দর। হামিদ সাহেব কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন? ভিআইপি দিয়ে। পত্র-পত্রিকায় দেখলাম উনি নাকি গেঞ্জি পড়ে, লুঙ্গি পড়ে, মাস্ক লাগিয়ে গিয়েছেন, লঙ্গি পুড়ক, গেঞ্জি পড়ুক, ভিআিইপিতে ঢুকলেন কিভাবে, যদি একান্ত পরিচিত না হয় কিংবা ভিআইপি লোক না হয়। সেই ভিআইপি সুবিধা নিয়ে এয়ারপোর্ট দিয়ে উনি পার হয়ে গেলেন, আর আমার সরকার বলে কিছু জানি না। ৬২২ জন আওয়ামী লীগের লোক পার হয়ে গেলো, এই সরকার বলে আমরা কিছু জানি না। জানেন কি? আপনারা কি জানেন এই জানাটা খুব দরকার, কিছুই জানেন না।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আরও জানি কি কি ঘটতাচ্ছে। নইলে শাহবাগের এই নাটক কেনো হঠাৎ করে। যে শাহবাগ আপনারা বন্ধ করেছেন, যে শাহবাগের এই সমস্ত এলাকাতে মিছিল-মিটিং করা যাবে না, সেখানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়, সরকারের দল এনসিপির লোকেরা ওখানে মিছিল-মিটিং করে কিভাবে? আর কোন দাবিতে মিছিল-মিটিং করলো। কি দাবি? আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে না করছে কে ভাই? কে না করছে? বিএনপি না করছে? খুব চেষ্টা করছে চালানোর জন্য বিএনপি নাকি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চায়। আমাদের ঠেকায় পড়ে গেছে, বড় ঠেকায় পড়ে গেছে।

আব্বাস বলেন, প্রশাসনে বিভিন্ন এলাকায় পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মকর্তাদের বাতিল করে সেখানে কমপক্ষে জামায়াতের লোকজনকে দিতে হবে, জামায়াত না হলে আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাচারি, সচিবালয়ের ভেতরে এই কর্মকাণ্ডগুলো শুরু হয়ে গেছে, বিএনপিকে রাখা যাবে না। এই যে বিএনপি নিধন আন্দোলন শুরু হয়েছে তারই একটি বিষয় হলো ৬২২ জন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগারদের পালিয়ে যেতে দেয়া, খুনির আসামী আবদুল হামিদ সাহেবকে পালিয়ে যেতে দেয়া, এটা হলো একটি বিষয়। এই সরকারের মধ্যে অবস্থানরত অনেক উপদেষ্টা যারা বাংলাদেশের নাগরিকই নন। তারা এই দেশ পরিচালনা করতেছেন। এসব থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে সরকার নানা কিছু ইস্যু করছে।

সেন্ট মার্টিন-সাজেক-বাঘাইছড়ি কেনো যেতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা কি ঔপনিবেশিক শাসনে আছি? আমার মনে হয় যে, আমরা দেশের মানুষের শাসনে নাই। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়িৃ এই সমস্ত এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আমি কেনো ইচ্ছা করলে সেন্ট মার্টিন যেতে পারি না, আামি কেনো ইচ্ছা করলে সাজেক যেতে পারব না, আমি কেনো ইচ্ছা করলে বাঘাইছড়ি যেতে পারবো না। আমি এটা সরকার থেকে জানতে চাই। আমরা কি কোনো পরাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করি। সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পাসপোর্ট ভিসা লাগবে। আমি এই সরকারের কাছে স্পষ্ট উত্তর জানতে চাই।

আব্বাস বলেন,তিনটা এলাকার নাম বলছি, সেন্ট মার্টিন, সাজেক, বাঘাইছড়ি, এই সমস্ত এলাকা আমাদের যাওয়াটা দুরুহ হয়ে গেছে। আবার শুনি, একটা জায়গায় নাকি করিডর দেয়া হবে। কিসের করিডর? মানবিক করিডর। আরে ভাই, বিশ্বের কোনো ডিকসেনারিতে মানবিক করিডরের নামে কোনো শব্দ আছে কি, কোথার থেকে এসব আবিষ্কার করেন? আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো করিডর কিংবা প্যাসেজ দেয়ার কোনো সুযোগ নাই জনগণের মতামত ছাড়া। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে?