
ঠিক যেন আলোকিত এক অধ্যায়ের ইতি ঘটল ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বললেন গুডবাই। মাঠে তার ব্যাটের জবাব ছিল বোলারদের কাছে দুর্বোধ্য, আর অবসরের সিদ্ধান্তও এলো নিরব কিন্তু দৃঢ় এক বার্তার মতো।
বলছিলাম সর্বকালের সেরাদের একজন বিরাট কোহলির কথা। কেন হঠাৎ করেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেন কোহলি?
বিরাট কোহলি কেবল একজন ক্রিকেটারই নন, তিনি এখন দুই সন্তানের জনকও বটে। লন্ডনে তার নিজস্ব বাড়িও আছে। সেখানে তিনি স্ত্রী আনুশকা শর্মা ও সন্তানদের নিয়েই সময় কাটান।
ইঙ্গিতটা তাই আগেই দিয়েছিলেন ৩৭ বছর বয়সি কোহলি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোই তার জন্য বেশি মূল্যবান। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যস্ততা তুলনামূলক কম, তাই শুধু এই ফরম্যাটেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে ব্যালান্স খুঁজে নিয়েছেন কোহলি।
অন্যদিকে ভারতের বর্তমান হেড কোচ গৌতম গম্ভিরও চেয়েছেন একদল তারকাবর্জিত, সমানাধিকারভিত্তিক দল গঠন করতে। কোহলি-রোহিতদের মতো তারকারা এতদিন যা পেয়েছেন- ব্যক্তিগত সহায়ক, ভিন্ন যাতায়াত সুবিধা- তা আর থাকছে না।
গম্ভিরের মতে, সবাই এখন একই নিয়মে চলবে।
কোহলি হয়তো এমন কাঠামোয় নিজেকে মানিয়ে নিতে চাননি, কিংবা একসময় যা তার পরিচয়ের অংশ ছিল, তা হারাতে চেয়েছেন নিজের শর্তে।
ফিটনেসে সবার জন্য আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকলেও, বয়স কিন্তু থেমে থাকে না। কোহলির নিজের কথায়, ‘৩৭ বছর বয়সে বড় ইনিংস খেলা কঠিন।’
পাঁচ দিনের ক্রিকেটের ধকল আর শরীর নিতে পারছে না আগের মতো। ম্যাচের পরে ক্লান্ত কোহলির শ্বাস নেওয়ার ভঙ্গি বা বিশ্রাম চাওয়া- এসব তার নিজস্ব উচ্চমানের সঙ্গে খাপ খায় না। তাই নিজেই সরে দাঁড়ালেন আগেভাগেই।
ক্যারিয়ারে ১২৩টি টেস্ট ম্যাচে ৪৬.৮৫ গড়ে ৯,২৩০ রান, ৩০টি শতক ও ৩১টি অর্ধশতকের মালিক কোহলি। অথচ গত পাঁচ বছরে টেস্টে তার গড় ছিল মাত্র ২৬.৮৯। সেঞ্চুরির খরা, অফস্টাম্পের বাইরের বলে ধারাবাহিকভাবে আউট হওয়া- সব মিলিয়ে নিজস্ব মানদণ্ডে তিনি যেন আর স্বচ্ছন্দে ছিলেন না। ইংল্যান্ড সফরে আরেকবার ব্যর্থ হলে হয়তো সম্মানজনক বিদায়টাও কঠিন হয়ে যেতো। তাইতো তার আগেই পরিণত সিদ্ধান্তে টেস্ট অধ্যায় শেষ করলেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঠ থেকেই এই ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন কোহলি। তার একটু পরেই একই ঘোষণা দেন রোহিত শর্মাও।
আর এবার আগে টেস্ট ছাড়েন রোহিত, ঠিক তার পরেই এলো কোহলির ঘোষণাও। দুজনের বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও সমান্তরাল ক্যারিয়ার, পথচলা দীর্ঘদিনের। রোহিতের অনুপস্থিতিতে টেস্ট দলে কোহলি হয়তো নিজেকে কিছুটা একাকী মনে করেছেন- যার প্রভাব পড়েছে তার সিদ্ধান্তেও।
১৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে বিরাট কোহলি বিদায়বেলায় লিখেছেন, ‘আমি টেস্ট ক্রিকেটকে সবকিছু দিয়েছি, আর এই ক্রিকেট আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি।’