Image description

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। হার্ভার্ড, কলাম্বিয়া, প্রিন্সটনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ বা সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সমালোচকদের মতে, এটি শুধু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

জানা যায়, হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল হারিয়েছে। এ কারণে প্রায় ১৮০ জন গবেষক ছাঁটাই হয়েছেন বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়টি।

প্রশাসনের দাবি, এসব বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ও একপাক্ষিক মতাদর্শ চর্চার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে হামাসের ইসরায়েল হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের জেরে এই সিদ্ধান্ত আরও শক্ত হয়।

ইতিমধ্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২.২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। এতে করে মোট ৯ বিলিয়নের বেশি তহবিল ঝুঁকির মুখে। ব্রাউন, কর্নেল, নর্থওয়েস্টার্ন, পেনসিলভানিয়া, কলাম্বিয়া ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ও অর্থনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি। কলাম্বিয়া প্রশাসন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সম্মত হয়ে কিছু শর্ত মেনে নেওয়ার পর ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান পুনরুদ্ধারে আলোচনা শুরু করেছে। 

অন্যদিকে, হার্ভার্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু শর্ত— যেমন বাইরের নিরীক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শে হস্তক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি— স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম. গারবার এক বিবৃতিতে জানান, আমরা আমাদের স্বাধীনতা বা সাংবিধানিক অধিকার ছাড়বো না। পরে হার্ভার্ড প্রশাসন আদালতের দ্বারস্থ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, তারা আগে থেকেই ইহুদিবিদ্বেষ রোধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু নর্থওয়েস্টার্নের মতো প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ তুলে ধরে তারা বলছে, সরকারের সিদ্ধান্ত কখনো কখনো অসঙ্গত ও অবিচারমূলক। প্রতিষ্ঠানটি ইহুদিবিদ্বেষ বিরোধী পদক্ষেপ নিলেও পরে সেটিকেও তহবিল সংকোচনের তালিকায় রাখা হয়।

এই উদ্যোগকে অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই এমন রাজ্য বা এলাকায় অবস্থিত, যেখানে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয়েছিল। এই তালিকায় রয়েছে কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলে ও লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাস, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

সরকারি অর্থায়নের পরিমাণও ছোট নয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল সরাসরি বাতিল বা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হার্ভার্ডসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে পরিচালিত গবেষণা, ড্রাগ স্ক্রিনিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, রাসায়নিক অস্ত্র প্রতিরোধ এবং ছাত্রঋণ কর্মসূচি— সবকিছুই এই প্রভাবের আওতায় পড়ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুধু আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থা নয়, দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপরও এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই ‘জবাবদিহি’র মধ্যে আনতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা খাতে এমন নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ দেশটির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা-গবেষণার ভবিষ্যৎকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। হার্ভার্ড প্রশাসনের প্রতিরোধকে কেউ কেউ দেখছেন উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতা রক্ষার ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে। এখন দেখার বিষয়— এই টানাপড়েনে শেষ পর্যন্ত জয় হয় স্বাধীন মত প্রকাশের, নাকি রাজনৈতিক চাপের।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস