ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে নতুন করে হামলা চালানো শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। রোববার মধ্যাঞ্চলের ব্যাপটিস্ট হাসপাতাল এবং আল-ওয়াফা হাসপাতালে গোলা ও মিসাইল ছোড়ে তারা। আলজাজিরা জানিয়েছে, আল-ওয়াফায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র সক্রিয় কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলা চালিয়ে সেখানকার সব মানুষকে জোরপূর্বক বের করে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় প্রায় ২৫০ জনকে আটক করে তারা। যার মধ্যে আছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডাক্তার হুসাম আবু সাফিয়া। আটক বেশির ভাগকে ইসরায়েলি সেনারা ছেড়ে দিলেও ডাক্তার সাফিয়াকে ছাড়েনি।
দখলদাররা এই চিকিৎসককে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, ডাক্তার সাফিয়াকে হামাসের সন্দেহভাজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা শনিবার জানান, ইসরায়েলি হামলার কারণে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সব রোগী ও চিকিৎসক সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। এতে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে ধরে নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালটি জ্বালিয়েও দেয়।
এদিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজাসহ অন্যান্য জায়গায় যেসব বর্বরতা চালাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে সাধারণ ইসরায়েলিদের অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আলজাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ফিলিস্তিন বিষয়ে সঠিক সংবাদ প্রকাশ করায় ইসরায়েলি সরকার কান নিউজ ও হারেতজের মতো স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এমনকি আলজাজিরাকে ইসরায়েলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইয়েমেনের সানা বিমানবন্দরে চালানো হামলার বিষয়ে সঠিক সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। তারা বলেছে, ইসরায়েলের সর্বোচ্চ পঠিত পত্রিকা ‘ফ্রি ইসরায়েল হায়োম’ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখই করেনি সানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। এর বদলে তারা উপস্থাপন করেছে, বিমানবন্দরে বিদ্রোহীদের সংবাদ সম্মেলন হচ্ছিল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পঠিত ‘ইয়েদিয়োথ আহরোহনোথ’ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ যে এই হামলায় নিন্দা জানিয়েছে, সেটি উল্লেখ করেনি। এ ছাড়া গাজার মানুষকে ইসরায়েল সরকার অনাহারে রেখেছে, সে ব্যাপারেও সাধারণ ইসরায়েলিদের কিছু জানতে দিচ্ছে না।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ হচ্ছে, গাজায় ত্রাণ ঠিকই যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো হামাস অথবা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা লুট করে নিচ্ছে। এতে তারা বোঝানোর চেষ্টা করছে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই। আর যদিও দুর্ভিক্ষ থেকে থাকে, সেটি হামাসের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা থেকে শুরু করে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই, যা তারা সংঘটিত করছে না। এসবের মধ্যে দখলদার ইসরায়েল জাতিসংঘের কাছে একটি প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে, যেখানে উল্লেখ আছে, হামাস যেসব জিম্মিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনে জিম্মিদের দেওয়া বক্তব্য থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে হামাস এ দাবি অস্বীকার করেছে। আগেও ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা এবং প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেগুলো ভুল প্রমাণিত হয়।