
ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এ ঘটনার জেরে হুতি বিদ্রোহী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা সহ্য করব না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেব।’
আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
সামাজিকমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রকাশিত ভিডিওতে নেতানিয়াহু বলেন, অতীতেও ইরানের সমর্থনপুষ্ট (হুতি) বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নিয়েছে’ ইসরায়েল, ‘ভবিষ্যতেও নেবে’। এবারের হামলার (প্রতিশোধমূলক) পদক্ষেপ এক দফায় নেওয়া হবে না, বরং বেশ কয়েক দফায় নেওয়া হবে।
পরবর্তীতে এক্সে দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, ‘নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়া সময় ও অবস্থানে ইরানকে জবাব দেবে ইসরায়েল।’
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অফ ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েল সফররত সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোদুলিদেসের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু উল্লেখ করেন, ‘আমরা, এবং আমাদের সঙ্গে গোটা বিশ্ব এখন হুতিদের হুমকির মুখে। আমরা এটা সহ্য করব না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেব।’
‘আমাদেরকে সব সময় মনে রাখতে হবে যে, তারা (হুতি) তাদের পৃষ্ঠপোষক ইরানের নির্দেশ অনুযায়ী ও তাদের সহায়তা নিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা ইরানকে যথোপযুক্ত সতর্কবার্তা দেব এবং তা দেওয়ার জন্য যা করণীয়, তাই করব। তারা জানবে, আমরা এ ধরণের কার্যক্রম সহ্য করব না।’
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশালে পোস্ট দেন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে শুরু করে হুতিদের কাছ থেকে আসা প্রতিটি গুলিকে ইরানের নেতৃত্বে, ইরানের অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ইরানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এবং তাদেরকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা খুবই ভয়াবহ হবে!।’
ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রশংসা করে নেতানিয়াহু বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। হুতিদের হামলা মানেই ইরানের হামলা। ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে হামলার উপযুক্ত জবাব পাবে হুতিরা।’
গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এটাই বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হুতিদের প্রথম সফল হামলার ঘটনা। এই হামলায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। হামলার পর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মাটিতে বড় একটি গর্ত তৈরি হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, হামলা প্রতিহত করার জন্য ‘বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানো হয়’। তবে ইয়েমেন থেকে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে লক্ষ্যে আঘাত হানে। বিশ্লেষকরা একে ‘বিরল ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
পরবর্তীতে সামরিক বাহিনী দাবি করে, কারিগরি সমস্যার কারণে মার্কিন থাড ও ইসরায়েলি অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উভয়ই এই হামলা ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা ক্যাবিনেট বৈঠক করেছে।
পুলিশের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তৈরি হওয়া গভীর গর্তের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় তাদের পেছনে নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার দেখা যায়।
ইসরায়েলি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘এবারই প্রথম কোনো ক্ষেপণাস্ত্র (বিমানবন্দরের) টার্মিনাল ও রানওয়ের এত কাছে আঘাত হেনেছে।’ ইয়েমেনের হুতিরা এই হামলার দায় নিয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তারা এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে।
হুতিরা জানায়, ‘ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। এই হামলায় হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।’