Image description

আল-জাজিরার প্রতিবেদন

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব প্রেস ফটো পুরস্কার লাভ করেন ফিলিস্তিনি চিত্র সাংবাদিক সামার আবু এলউফ। তিনি “নয় বছর বয়সী মাহমুদ আজজুর” শিরোনামে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় হাত হারানো এক শিশুর ছবি তুলেছিলেন। ছবিটিতে ছায়ায় ঢাকা সেই শিশুর মুখে শূন্য দৃষ্টিতে যেন গোটা জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।

আজজুর, যার উভয় হাতই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এক বিমান হামলায়, জানায়—মা যখন প্রথম জানায় সে আর কখনো কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না, সে ভেঙে পড়ে কাঁদতে শুরু করে। অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেসথেশিয়া না থাকায় তাকে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠতে হয়। এই বেদনা গাজার প্রতিটি করিডরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

ছবির সাংবাদিক আবু এলউফের ভাষায়, শিশুটির প্রথম প্রশ্ন ছিল: “আমি কীভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরব মা?”

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ডিসেম্বরেই ইউনিসেফ জানায়, অন্তত ১,০০০ শিশু পা হারিয়েছে। আর এপ্রিলের শুরুর দিকে জাতিসংঘ জানায়, প্রতিদিন গাজায় গড়ে ১০০ শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে—“একটি ছবি যদি হাজার শব্দের সমান হয়, তাহলে গণহত্যাকে তুলে ধরতে কত ছবি প্রয়োজন?”

ঠিক এমনই একটি ছবি আধা শতাব্দী আগেও সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭২ সালের ৮ জুন, ভিয়েতনামে মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামি বাহিনীর ভুলে নিজ নাগরিকদের উপর নাপাম বোমা পড়লে নয় বছর বয়সী কিম ফুক নগ্ন অবস্থায় আগুনে ঝলসে দৌড়ে পালায়। সেই মুহূর্তটি ক্যামেরায় ধারণ করেন এপি ফটোগ্রাফার নিক উট। ছবিটি পরবর্তীতে “Napalm Girl” নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পায়।

এই ছবিটি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব গড়ে তুললেও, বাস্তবে নিক উটের ছবির তিন বছর পরেও যুদ্ধ থামেনি। তেমনি আজকের দিনে গাজা থেকে আসা প্রতিটি ছবিই যেন “The Terror of War” শিরোনামের পুনরাবৃত্তি, যেখানে নিপীড়ন অব্যাহত থাকে, বারবার।

আর আজকের যুগে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আর ভিডিও হয়ে গেছে কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়, তখন সহিংসতার প্রতি সমাজের অসাড় হয়ে পড়া আর অস্বাভাবিক কিছু নয়—even যখন তা হাতবিহীন নয় বছর বয়সী এক শিশুকে নিয়েও হয়।

১৮ এপ্রিল ইনস্টাগ্রামে আবু এলউফ লেখেন:

 “আমি সবসময় চাই একদিন এমন একটি ছবি তুলতে পারি যা এই যুদ্ধ থামিয়ে দেবে, যা হত্যা, ক্ষুধা আর ধ্বংস বন্ধ করবে। কিন্তু যদি আমাদের ছবি এই দুঃখের স্রোত থামাতে না পারে, তাহলে ছবিরই বা মূল্য কী? আপনি কেমন ছবি দেখলে বুঝবেন গাজার মধ্যে কী ঘটছে?”

এই প্রশ্নে থমকে দাঁড়াতেই হয়। কারণ এই প্রশ্নে শুধু ছবির নয়, লেখারও মূল্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে: শেষ পর্যন্ত, একটি মতামত নিবন্ধেরই বা মূল্য কত?