Image description

লেবাননের শীর্ষ সামরিক সংস্থা সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল শুক্রবার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, যেন তারা এমন কোনো তৎপরতা চালায় না যা দেশটির নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বকে বিঘ্নিত করে।

৩ মে (শনিবার) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

এই সতর্কবার্তা আসে এমন এক সময়ে, যখন লেবানন থেকে ইসরাইলের উত্তর দিকে রকেট নিক্ষেপের ঘটনায় কয়েকজন লেবানিজ ও ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কাউন্সিল একাধিক সুপারিশ মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল: হামাসকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, তারা যেন লেবাননের ভূখণ্ড ব্যবহার করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়, যা লেবানের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

প্রতিবেদন আরও জানায়, লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী যে কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন, যিনি এই প্রথম কাউন্সিল বৈঠকে উপস্থিত হলেন।

কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আল-মুস্তাফা বলেন, বিভিন্ন সামরিক ও নিরাপত্তা সংস্থা লেবানের একাধিক অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে, বিশেষ করে রকেট নিক্ষেপের ঘটনা, সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে।

গত ২২ ও ২৮ মার্চ লেবানন থেকে ইসরাইলের দিকে রকেট নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে লেবাননের নিরাপত্তা সংস্থা।

বৈঠকে জানানো হয়, আটকদের এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

আউন বৈঠকে বলেন, জাতীয় চুক্তি, শপথ বক্তৃতা এবং মন্ত্রিসভার বিবৃতি অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার এবং লেবাননের সর্বত্র রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে কেউ লেবাননকে অস্থিতিশীলতার প্ল্যাটফর্ম বানাতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি সংগ্রামের গুরুত্ব স্বীকার করে লেবাননকে কোনো সংঘর্ষে জড়ানোর বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান জানান।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেন, জাতীয় চুক্তি ও মন্ত্রিসভার বিবৃতির আলোকে অবৈধ অস্ত্র সমর্পণ নিশ্চিত করতে হবে এবং হামাসসহ কোনো গোষ্ঠী যেন লেবানের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লেবাননের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা সবার ঊর্ধ্বে। আন্তর্জাতিক আইন এবং আরব শান্তি প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।

এক নিরাপত্তা সূত্র ‘আরব নিউজ’-কে জানায়, এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কারণ লেবানন সেনাবাহিনী হামাসকে আহ্বান জানিয়েছে যে, তারা যেন আইন আল-হিলওয়ে শরণার্থী শিবিরে লুকিয়ে থাকা চার সন্দেহভাজনকে হস্তান্তর করে, যারা রকেট হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত।

সূত্র জানায়, এই চারজন মূলত হামাসের সামরিক শাখার সদস্য, আর সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া চারজন কেবল রকেট নিক্ষেপের কাজটি সম্পন্ন করেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, হামাসের নেতৃত্ব এই চারজনকে রক্ষা করতে রাজনৈতিক নেতাদের, বিশেষ করে হিজবুল্লাহপন্থি স্পিকার নাবিহ বেরিকে ফোন করে চাপ দিতে চেয়েছিল। 

তবে জবাবে জানানো হয়েছে, এটি সেনাবাহিনীর এখতিয়ারভুক্ত এবং হামাসের পক্ষে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।

ফিলিস্তিনি গবেষক ও ‘তাতওয়ের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এর পরিচালক হিশাম দেবসি বলেন, হামাস যা করেছে তা লেবাননের দৃষ্টিতে এক ধরণের দৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। তারা নিজেদের অস্ত্র সমর্পণকে হিজবুল্লাহর অস্ত্র হস্তান্তরের সঙ্গে তুলনা করেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে অস্ত্র গচ্ছিত রাখা একটি ধাপে ধাপে নিষ্পত্তির বিষয় এবং এটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হবে। এ প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের আসন্ন ২১ মে-র লেবানন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৭ ও ২০০৯ সালের পর এটি হবে আব্বাসের তৃতীয় লেবানন সফর। 

সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল সুলাইমানের সঙ্গে দেখা করার পর আব্বাস বলেছিলেন, লেবানন সরকার যা বলবে, আমরা তারই বাস্তবায়ন করব। ফিলিস্তিনি অস্ত্র আজ আর আমাদের সংগ্রামের কাজে আসে না, বরং সেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।