
কথা ছিল ২০২২ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন দেবেন। কিন্তু তিন বছর পরে এসে নির্বাচন ছাড়াই ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন মালির সামরিক প্রধান গেন আসসিমি গোইতা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এ পর্যন্ত দুবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা দখল করেছেন গোইতা। সর্বশেষ ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেন, পরের বছর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই পরের বছর আর কখনও আসেনি। তখন থেকেই দেশটির অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ৪১ বছর বয়সী গোইতা।
মালির নির্বাচনসহ অন্যান্য বিষয়ের সুরাহা হওয়ার জন্য একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছিল অস্থায়ী সরকার। সেখানে অংশগ্রহণকারী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সুপারিশ করে, গোইতাকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখা হোক।
এদিকে, সম্মেলনে বয়কট করেছিল দেশটির প্রধান বিরোধীদল।
রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি গোইতা। বিশ্লেষকদের ধারণা, নিজের ক্ষমতাকে আইনসিদ্ধ করতেই উক্ত সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি।
তবে গোইতা এভাবে ক্ষমতায় থেকে গেলে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়বে।
মালির বিরোধীদলীয় নেতা মোহামেদ সালিয়া তৌরে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বহুদলীয় রাজনীতিকে দমানোর চেষ্টা করটা হবে ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত।
সম্মেলনের সুপারিশকে ‘মালির সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করার প্রস্তাব’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির সাহেল অঞ্চলের গবেষক উসমান দিয়ালো বলেন, এই প্রস্তাবে আমি আতঙ্কিত। এটি মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।
অবশ্য, সম্মেলনের সুপারিশ নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা এখনও রয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করা হবে নাকি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ দলগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হবে, সম্মেলনের বিবৃতি থেকে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়নি।
এএফপির হাতে আসা এক নথি অনুযায়ী, দেশে শান্তি স্থাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনও কার্যক্রম স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা।
মালির ক্ষমতাসীন সেনা সরকার বর্তমানে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা দমনে ব্যস্ত। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ বুরকিনা ফাসো ও নাইজারের সেনাশাসকদের সঙ্গে জোট গড়ে তুলেছেন গোইতা। এই তিন দেশ এখন ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে।