
রাজনৈতিক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার একশ দিন পার করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প। এই ১০০ দিনেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বিশ্ব। একদিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যুদ্ধ বন্ধের স্বপ্ন। অন্যদিকে চীনে চড়া শুল্কারোপ করে বিশ্বের অর্থনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছেন অনিশ্চয়তার ঘূর্ণি। উসকে দিয়েছেন বাণিজ্য যুদ্ধ। ছাড়ছেন না ইরানকেও। ব্যাপক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছেন দেশটিতে। পুরো বিশ্বকেই ঠেলে দিয়েছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।
শুধু শুল্ক কিংবা বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রেই যে ট্রাম্প আগ্রাসী হয়েছেন তা নয়, তিনি একযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থা এবং পরিবেশ নীতি পর্যন্ত টালমাটাল করে তুলেছেন। যার জেরে জনপ্রিয়তায়ও ব্যাপক ধস নেমেছে তার। যেভাবে তিনি নির্বাহী ক্ষমতা বিস্তারে বেপরোয়া পদক্ষেপ নিয়েছেন আর রাজনৈতিক প্রতিশোধের হুমকি ছাড়িয়েছেন তাতে শুধু মার্কিনিরাই নন, সমালোচনা করছে গোটা বিশ্ব।
ট্রাম্প একযোগে ১৪০টির বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। যার মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ, পরিবেশ নীতি প্রত্যাহার, মেগা-বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্কের মাধ্যমে ফেডারেল ব্যুরোক্রেসি ভেঙে দেওয়া এবং বেশির ভাগ দেশের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক বাণিজ্য অভিযান চালানো অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভাজন আরও গভীরও করেছেন তিনি। যার জেরে মাত্র ১০০ দিনের মধ্যেই নানা সমালোচনা ও জন-অসন্তোষের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। দেশজুড়ে তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে মাত্র ৪১ শতাংশে। আর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তার প্রতি আস্থা মাত্র ৩৯ শতাংশ নাগরিকের।
গত ৭০ বছরে কোনো প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এমন পতন দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি এবং বিতর্কিত শুল্কনীতিই এই জনপ্রিয়তা হ্রাসের মূল কারণ। দায়িত্ব নেওয়ার পর উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ও মহামারি-পূর্ব অর্থনীতি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে ট্রাম্পের নীতিমালা ব্যয় আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বাজারে দেখা দিয়েছে সংকট।
ট্রাম্পের ওপর বিশ্ব অসন্তুষ্ট হলেও নিজের ওপর বেশ সন্তষ্ট মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। তাই তো ১০০ দিন উদযাপনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার মিশিগানে একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে তার। যেখানে নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি।