
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধরত এক চীনা নাগরিক দাবি করেছেন, তার ঊর্ধ্বতনরা তাকে লোহার শিকলঘেরা অন্ধকার গর্তে ২১ দিন আটকে রেখেছিলেন, যেখানে মাথা তুলেও দাঁড়ানো যেত না। তার ‘অপরাধ’ ছিল প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার নিয়ে এক কর্মকর্তার সঙ্গে বিরোধে জড়ানো।
ছদ্মনামে পরিচিত ‘মাইকেল’ বলেন, বিদেশে সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধমাঠে যোগ দিলেও এখন মনে করছেন পুতিনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া ছিল 'একটি ভুল'।
সিএনএনকে দেওয়া ফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রুশ বাহিনীতে দুর্নীতি, দুর্বল সরঞ্জাম ও অমানবিক আচরণ বিরাজমান। তার অভিজ্ঞতা তাকে চীনা নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিতে বাধ্য করেছে—“এখানে এসো না।”
ইউক্রেন ও রাশিয়া—উভয় দেশেই বিদেশি যোদ্ধা রয়েছে। এপ্রিলের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, তারা দুই চীনা যোদ্ধাকে বন্দি করেছে এবং আরও অনেকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন। বেইজিং এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চীনা নাগরিকদের যেকোনো পক্ষের হয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
মাইকেল জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বরে তিনি পর্যটন ভিসায় মস্কো যান এবং ওয়াগনার গ্রুপে যোগ দেন। ছয় মাস পর বাখমুতে যুদ্ধ করতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করেন। তার বেতন ছিল মাসিক ২ লাখ রুবল (প্রায় ২,৪০০ ডলার)।
আরেক চীনা যোদ্ধা জানান, তিনি আগের আয়ের তিনগুণ পাচ্ছিলেন রাশিয়ায় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। তার মতে, অর্থ নয়—‘জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা’ তাকে রাশিয়ার বাহিনীতে টেনে আনে।
অনেকে ডৌইনে (টিকটকের চীনা ভার্সন) রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধের ভিডিও পোস্ট করছিলেন, তবে জেলেনস্কির অভিযোগের পর অনেক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়। যদিও চীনা ইন্টারনেটেও এখনো রুশ নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের পক্ষে লড়া চীনাদের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক আদর্শ ও চীনা কমিউনিস্ট বিরোধী মনোভাব। যেমন একজন যোদ্ধা, ‘জেসন’, বলেন—তিনি চান তাইওয়ান আক্রান্ত হলে অন্য কেউ যেন চীনের বিপক্ষে দাঁড়ায়।
পিএইচডি শিক্ষার্থী ‘সোফি’ জানান, ইউরোপে পড়ার সময় চীনা সেন্সরের বাইরে গিয়ে তার রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয় এবং ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধের আবেদন করেন। মাইকেল ও জেসন উভয়ের বক্তব্যে একটি মিল—বাস্তব যুদ্ধ ভয়াবহ ও অমানবিক। মাইকেলের ভাষায়, “এটা অকল্পনীয় রকমের নির্মম।”