
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে চীনের ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। সব দেশই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীন। সেই তুলনায় চীনের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের ওপর শুল্ক অনেকটাই কম। চীনের ওপর শুল্ক যেখানে ১৪৫ শতাংশ, সেখানে ভারতের পণ্যে শুল্ক মাত্র ২৬ শতাংশ। এ বাস্তবতায় নতুন এক সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
এই বাস্তবতায় চীনের ব্যবসায়ীরা ভারতের রপ্তানিকারকদের দ্বারস্থ হয়েছেন। লক্ষ্য হলো, চীনের তৈরি পণ্য ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে মার্কিন মুলুকে পাঠানো। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গ্রাহক ধরে রাখতে মরিয়া চীনা কোম্পানিগুলোর ভরসা এখন ভারত।
চীনের গুয়াংজু শহরে চলছে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য মেলা ক্যান্টন ফেয়ার। ২৭ এপ্রিল এই মেলার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হয়েছে। আগামী ৫ মে থেকে এর তৃতীয় পর্যায় শুরু হবে। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির জন্য অনেক চীনা কোম্পানি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ওই মেলায়। এর বদলে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে কমিশনও দিতে রাজি চীনা কোম্পানিগুলো। অজয় জানিয়েছেন, হ্যান্ড টুলস, ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মতো খাত থেকেই এসব অনুরোধ বেশি আসছে।
চীন থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো অধিকাংশ পণ্যেই শুল্ক আরোপিত হবে ১৪৫ শতাংশের বেশি। ভারতের পণ্যেও ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের জন্য এখন ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক লাগবে ১০ শতাংশ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে চীনের কোম্পানিগুলো। তবে শুধু চীনা কোম্পানি নয়, চীনে কর্মরত বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানিও একই পন্থা অবলম্বন করছে।
ভারতের জলন্ধরের কোম্পানি ওইকেই টুলস বিভিন্ন ধরনের হ্যামার, কোল্ড স্ট্যাম্প মেশিনের মতো টুলস তৈরি করে। ওই কোম্পানির সঙ্গে চীনে কারখানা থাকা মার্কিন কোম্পানি যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির। এ বিষয়ে কোম্পানিটির রপ্তানিবিষয়ক কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত আগরওয়াল বলেছেন, ‘চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’ ভিক্টর ফর্জিংস নামের এক কোম্পানির কাছেও চীনা কোম্পানি থেকে একই ধরনের অনুরোধ এসেছে। ওই কোম্পানি ব্যবসা বৃদ্ধিতে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
ভারতে চীনের বিনিয়োগে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে চীনের কোম্পানিগুলোর পক্ষে ভারতে কারখানা স্থাপন করা বা ভারতের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা কঠিন। সে কারণে ক্যান্টন মেলায় চীনের কোম্পানিগুলোর অনুরোধ, তাদের পণ্য যেন চীনের ব্র্যান্ড বা ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহ–ব্র্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়।
ট্রাম্পের শুল্কের জেরে সাময়িক কিছু সমস্যা হলেও ভারতের জন্য নতুন বেশ কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন কোম্পানি চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। সে লক্ষ্যে চীনের কারখানায় উৎপাদন কমিয়ে ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। অ্যাপলও এই পন্থা নিয়েছে। তবে এই সুযোগ ভারত ঠিক কতটা নিতে পারবে, তা নির্ভর করবে ভারতের সক্ষমতার ওপর, বিশ্লেষকেরা তেমনটাই মনে করছেন।