
Mozammel Hossain Toha (মোজাম্মেল হোসেন তোহা)
মাহমুদ আব্বাসের পাশের এই লোকের নাম হুসেইন আল-শেইখ। গতকাল এই লোককে পিএলও'র ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, মাহমুদ আব্বাস যদি মারা যায় বা পদত্যাগ করে, তাহলে এই লোকই হবে পিএলও'র চেয়ারম্যান, এবং সেই সূত্রে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, গতকালের আগেও পিএলও'র মধ্যে ডেপুটি চেয়ারম্যান নামে কোনো পদ ছিল না, বা ফিলিস্তিনে ভাইস প্রেসিডেন্ট নামে কোনো পদ ছিল না। এই পদগুলো রাখা হয়নি, যেন প্রেসিডেন্ট একাই স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে দেশ চালাতে পারে। তার সামনে অন্য কেউ যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে না ওঠে।
এখন মাহমুদ আব্বাসের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে, তখনই নতুন করে এই পদের সৃষ্টি করা হলো, যেন তার উত্তরসূরী নিশ্চিত করা যায়। এবং সেই পদে এমন একজনকে বসানো হলো, যার সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক মাহমুদ আব্বাসের চেয়েও গভীর।
২০০৭ সালে যখন হামাস গাযার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তখন থেকেই ইসরায়েলের সাথে মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক আরও জোরালো হয়ে উঠতে শুরু করে। আর সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত এই কোর্ডিনেশনের অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছে এই হুসেইন আল-শেইখ।
তার পদটার অফিশিয়াল নাম হেড অব জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাফেয়ার্স, কিন্তু বাস্তবে তার মূল কাজ ছিল ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করা, পশ্চিম তীরকে কীভাবে হামাস এবং সেই সাথে যেকোনো প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে নিরাপদ রাখা যায় সে ব্যাপারে তাদের সাথে পরিকল্পনা করা, তাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পারমিট ইস্যু করা বা রিভোক করা।
গত ১৮ বছর ধরেই ধীরে ধীরে হুসেইনকে প্রস্তুত করা হয়েছে আব্বাসের উত্তরসূরী হিসেবে। গতকাল সেটা অফিশিয়াল রূপ পেল।
===
এই যে শূন্য থেকে একটা পোস্ট তৈরি করে সেখানে নিজেদের পছন্দের লোককে বসানো - এটা কিন্তু খোদ মাহমুদ আব্বাসের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। মাহমুদ আব্বাসের উত্থান সম্পর্কে নিচের অংশটুকু পড়লেই বুঝতে পারবেন। অংশটুকু আমার বই "দ্য রোড টু অপারেশন আল আকসা ফ্লাড" থেকে নেওয়া:
//দ্বিতীয় ইন্তিফাদার শুরু থেকেই আমেরিকা এবং ইসরায়েল সেটার জন্য ইয়াসির আরাফাতকে দায়ী করে আসছিল। ইন্তিফাদা যখন সশস্ত্র যুদ্ধে রূপ নেয়, তখন জর্জ বুশ এবং এরিয়েল শ্যারন মিলে ইয়াসির আরাফাতকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ইসরায়েল যখন ইয়াসির আরাফাতকে মুক্বাতায় অবরুদ্ধ করে ফেলে, তার দুই মাস পর প্রেসিডেন্ট বুশ তার হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেন থেকে ঘোষণা করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার আগে ফিলিস্তিনিদেরকে এমন একটা নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে, যে নেতৃত্ব সন্ত্রাসীদের সাথে আপোষ করবে না।
পরবর্তী মাসগুলোতে আমেরিকা ইয়াসির আরাফাতের ক্ষমতা খর্ব করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভেতরে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত “মধ্যপন্থি”, তথা ইসরায়েলের সাথে সমঝোতাপন্থিদের হাতে সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে থাকে। তাদের চাপে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ "প্রধানমন্ত্রী" নামে নতুন একটা পদের সৃষ্টি করে এবং আমেরিকা ও ইসরায়েলের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের পছন্দের প্রার্থী মাহমুদ আব্বাস ওরফে আবু মাজেনকে সেই পদে নিযুক্ত করে।
মাহমুদ আব্বাস ছিলেন তখন পর্যন্ত বেঁচে থাকা ফাতাহ'র প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের মধ্যে একজন। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যান্য নেতার সাথে আব্বাসের পার্থক্য ছিল, তিনি তার জীবনে কখনও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। তিনি এমনকি কোনো ধরনের লড়াইয়ের পরিকল্পনার সাথেও কখনও জড়িত ছিলেন না। তার ভূমিকা ছিল প্রধানত আমলাতান্ত্রিক– পর্দার আড়ালে থেকে দলের কার্যক্রম দেখাশোনা করা, আর্থিক অনুদান জোগাড় করা, এবং বিভিন্ন পক্ষের সাথে আলোচনা করা।
সত্তরের দশক থেকেই আব্বাস ইসরায়েলের সাথে শান্তি আলোচনার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে যখন অসলোতে গোপনে শান্তি আলোচনা শুরু হয়, তখন ইয়াসির আরাফাত তাকেই শান্তিচুক্তি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেন। পিএলওর দিক থেকে আব্বাসই ছিলেন অসলোর অন্যতম প্রধান কারিগর। এমনকি, অসলো চুক্তিতে থাকা স্বাক্ষরটাও মাহমুদ আব্বাসের; ইয়াসির আরাফাতের না।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদা যখন শুরু হয়, তখন মাহমুদ আব্বাস ফাতাহ’র অধিকাংশ নেতার বিপরীতে গিয়ে প্রকাশ্যে এর সশস্ত্র রূপের বিরোধিতা করেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন আমেরিকা এবং ইসরায়েলের পছন্দের প্রার্থী। এই প্রেক্ষাপটেই আমেরিকা তাকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার ব্যবস্থা করে এবং ইয়াসির আরাফাতের হাত থেকে বিভিন্ন নির্বাহী ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আব্বাসের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। ... //