
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলায় প্রিয়জন হারিয়েছেন নানা প্রান্তের মানুষ। মাত্র সাত দিন আগে বিয়ে করে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক নৌ-কর্মকর্তা। স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামী নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা নারী-পুরুষকে আলাদা করে বিশেষ করে পুরুষদের নিশানা করেই গুলি চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। ভয়াবহ হামলার সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া পর্যটকরা।
পর্যটকদের একটি দলের উপর আচমকাই গুলি চালিয়েছিল বন্দুকধারীরা। কর্ণাটক রাজ্যের শিবমোগ্গার বাসিন্দা পল্লবী জানান, তার স্বামী মঞ্জুনাথ জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন চোখের সামনেই। তিনি বলেন, “আমরা কাশ্মীর গিয়েছিলাম বেড়াতে।”
আমার স্বামী রুটি কিনতে গিয়েছিলেন আমাদের ছেলে অভিজেয়র জন্য। কারণ, সে সেদিন সকাল থেকে কিছু খায়নি। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে আমরা ভাবি সেনাবাহিনী হয়ত গুলি চালাচ্ছে। তারপরই মানুষজন দৌড়াতে শুরু করে। আমি দেখি, আমার স্বামী রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন। মাথায় গুলি লেগেছিল।”
পল্লবী আরও জানান, তিনি এবং তার ছেলে জঙ্গিদের সামনে দাঁড়িয়ে অনুরোধ করেন তাদেরও হত্যা করতে, কিন্তু জঙ্গি বলেন, "আপনাদের মারব না। মোদীকে গিয়ে বলেন।” পল্লবীর ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা সেনা পোশাকে ছিল না, এবং মূলত পুরুষদেরকেই লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
হামলার ঘটনায় নিহত হন নৌ-বাহিনীর ২৬ বছর বয়সী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালও। সদ্য বিবাহিত এই কর্মকর্তা সস্ত্রীক ছুটি কাটাতে কাশ্মীর গিয়েছিলেন। ১৬ এপ্রিল তার বিয়ে হয়, ১৯ তারিখ ছিল বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। এরপরই তিনি কাশ্মীরে বেড়াতে যান। তার মৃত্যুর খবর শুনে স্তম্ভিত তার পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা।
বিনয়ের এক প্রতিবেশী জানান, “মাত্র চার দিন আগে বিয়ে হয়েছিল। সবার মুখে হাসি ছিল। খবর পেলাম, জঙ্গিরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।”
জঙ্গি হামলায় মহারাষ্ট্রেরও পাঁচজন পর্যটক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। তিনি কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহনমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে নেমে এসেছে শোক। হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। বারামুলা, শ্রীনগর, পুঞ্চ, কুপওয়ারা ও জম্মুতে মশাল মিছিল হয়েছে। জম্মুতে বজরং দল কর্মীরাও বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলার নিন্দা করে বলেছেন, “এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের অপকর্ম সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আরও কঠোর হবে।”
ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে গিয়ে উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে ভারতীয় সেনা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ পাহেলগামের বাইসরান এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। দিল্লি পুলিশকেও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কাশ্মীর সফরে যাওয়া পল্লবী এখনও স্বামীর মরদেহ কবে, কীভাবে শিবমোগ্গায় ফিরিয়ে আনা হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন একসঙ্গে এসেছিলাম, তিনজন একসঙ্গেই ফিরব।”