Image description
 

সম্প্রতি সফলভাবে হাউড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে চীন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, হাউড্রোজেন নাকি অ্যাটম বোমা কোনটি বেশি ভয়ংকর। চীনের এ পরীক্ষার ফলে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গেছে। যদিও হাইড্রোজেন বোমা এখন পর্যন্ত কখনো যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি পুরো শহর ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা সাধারণ পারমাণবিক বোমার চেয়েও বহুগুণ ভয়ঙ্কর।

হাইড্রোজেন বোমা কেন বেশি শক্তিশালী? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে, যাতে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। এই ধ্বংসযজ্ঞই জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাইড্রোজেন বোমা পারমাণবিক বোমার চেয়ে ১,০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হতে পারে। ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে একটি পরীক্ষায় এর ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছিল।

হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের ফলে শক ওয়েভ, তাপ, বিকিরণ ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিসর অনেক বেশি হয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির পারমাণবিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এডওয়ার্ড মরস বলেন, নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমায় এক মাইলের মধ্যে সবাই মারা যায়। হাইড্রোজেন বোমার ক্ষেত্রে সেই পরিসর হতে পারে ৫ থেকে ১০ মাইল।

 

কারিগরি দিক : ফিশন বনাম ফিউশন পারমাণবিক বোমা কাজ করে ফিশন প্রযুক্তিতে- যেখানে ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের নিউক্লিয়াস ভেঙে প্রচুর শক্তি তৈরি হয়।

 

অন্যদিকে, হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহার করে ফিউশন পদ্ধতি- যেখানে হাইড্রোজেনের দুটি আইসোটোপ (ডিউটেরিয়াম ও ট্রাইটিয়াম) একত্র হয়ে নতুন নিউক্লিয়াস তৈরি করে এবং এর ফলে ফিশনের চেয়েও বেশি শক্তি নিঃসরণ হয়। তবে হাইড্রোজেন বোমা তৈরির জন্য প্রথমে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিউশন শুরু করতে হয়। তাই এটিকে উন্নততর পারমাণবিক অস্ত্র বলেও ধরা হয়।

 

ধ্বংসের পরিধি পারমাণবিক বোমা ফিশন প্রযুক্তিতে এক মাইল এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। অন্যদিকে হাইড্রোজেন বোমা ফিশন এবং ফিউশন প্রযুক্তি বলে এক লাখ থেকে কয়েক লাখ কিলোটন শক্তি নিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মাইল এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইড্রোজেন বোমা একটি সম্পূর্ণ আধুনিক শহর ধ্বংস করে দিতে পারে, যেখানে সাধারণ পারমাণবিক বোমা ভয়াবহ হলেও তুলনায় কম ক্ষতিকর।

উভয়ের মিল উভয় বোমাই তাৎক্ষণিকভাবে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নিতে সক্ষম। এ দুটি বোমাই বিস্ফোরণের পর তাপ, শকওয়েভ ও বিকিরণ মুহূর্তেই শহরকে ছাই করে দিতে পারে।

এছাড়া এর ফলে কাঠের তৈরি ঘর-বাড়ি মুহূর্তে জ্বলে যায়, কংক্রিট ভবনও ধসে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি রেডিয়েশন আক্রান্তদের মৃত্যুর হারও বেশি থাকে।

১৯৪৬ সালে লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাটম বোম বিস্ফোরণের পরের ঢেউয়ে মানুষের দেহ ভেঙে পড়ে, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেহগুলো ৫০০ থেকে ১,০০০ মাইল বেগে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে ছুড়ে ফেলা হয়। ৬,৫০০ ফুট ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রায় সবাই মারা যায় বা গুরুতর আহত হন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, হাইড্রোজেন বোমায় যে শক্তি নির্গত হয় তা পারমাণবিক বোমার তুলনায় অনেক গুণ বেশি। একটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণে পুরো একটি শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

ফিশনে, একটি অ্যাটম ভেঙে দুই বা তার চেয়ে বেশি ছোট এবং হালকা অ্যাটমে পরিণত হয়। ফিউশনে, দুটি বা তার বেশি অ্যাটম একত্রিত হয়ে একটি বড় এবং ভারী অ্যাটম গঠন করে। হাইড্রোজেন বোমা হাইড্রোজেন অ্যাটমের ফিউশন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে, এজন্যই এর নাম হাইড্রোজেন বোমা।

একটি ফিউশন বোমা অনেক বেশি উন্নত এবং তৈরি করা কঠিন, কারণ এটি কার্যকর করতে মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। এজন্য প্রথমে একটি ফিশন বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাথমিক শক্তি তৈরি করা হয়, যা ফিউশন শুরু করতে সহায়তা করে। অর্থাৎ, ফিউশন বোমায় ফিশন ডিভাইস প্রথমে সক্রিয় করতে হয়। এছাড়া ছোট আকারে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ, ফলে এগুলো সহজেই মিসাইলে সংযুক্ত করা যায়।

সূত্র : টাইমস ম্যাগাজিন