Image description
পারভেজের মায়ের আর্তনাদ

বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হলো মেধাবী ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে। রাজধানীর বনানীতে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত পারভেজের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকার কাইচান গ্রাম এখন শোকে স্তব্ধ। ছেলে হারানোর শোকে পারভেজের বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। একমাত্র ছোট বোনসহ পরিবারের কেউই এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। পুরো এলাকাতেই এখন শোকের ছায়া। নিজের তৈরি বাড়িতে থাকবেন পারভেজ কিন্তু সেই বাড়িতে আর থাকা হলো না। বাকরুদ্ধ মা-বাবা ছেলের স্মৃতি হাতড়ে বেরাচ্ছেন। বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন একমাত্র ছোট বোন। নিহত পারভেজের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে হতবাক ও বাকরুদ্ধ স্বজনসহ এলাকার সবাই। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসী। ছেলের আকস্মিক মৃত্যুর খবর শুনে রোববারই কুয়েত থেকে দেশে ফিরেন বাবা জসিম উদ্দিন। বাবা বিদেশে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজের গ্রামের বাড়িতে নতুন একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন পারভেজ। কিন্তু সেই বাড়িতে আর থাকা হলো না তার।

পারভেজের এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড এলাকার মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। লাশ তার বাড়িতে পৌঁছার আগেই এলাকার শত শত মানুষ বাড়িতে জমা হয়, শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য। রোববার বিকালে পারভেজের কফিনবাহী এম্বুলেন্স গ্রামে আসার পর সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের। বাবা, মা ও স্বজনদের গগণবিদারি আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। পাভেজের বাবার একটিই প্রশ্ন ‘আমি জিগাইতাম, কেরে আমার ছেলের মারছে। আমার আর বাইচ্চা থাইক্যা কি অইবো। আমার ছেলেই তো নাই। হাত-পা ভাইঙ্গা রাখতো, সারাজীবন পালতাম, খালি বাবা ডাকটা শুনতাম।’ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অবিরাম কাঁদছেন মা পারভীন আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়ছেন। জ্ঞান ফিরলে বিলাপ করে বলছেন, ‘আমার পুতেরে আইনা দাও। আমি একটাবার পুতের মুহেত্তে মা ডাক হুনবার চাই।’ জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী জসিম উদ্দিন ও মা পারভীন আক্তারের একমাত্র ছেলে। পারভেজের ফুফাতো ভাই হুমায়ূন কবির জানান, পারভেজ স্থানীয় কংশেরকুল উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি ও ২০১৯ সালে ময়মনসিংহের রয়েল মিডিয়া মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হোন।

শনিবার রাজধানীর বনানীতে হাসাহাসির মতো তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন। ২০শে এপ্রিল রোববার রাত ৯টায় গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।  পারভেজের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে।

বিরোনীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন সরকার জানান, এলাকায় সজ্জন সদাহাস্যেজ্জ্বল ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত পারভেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বাবাও ছাত্রদল করতেন। তার পুরো পরিবার বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি পারভেজ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ নেয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে প্রথম জানাজা হয়। জানাজা শেষে নয়াপল্টন থেকে মরদেহ নেয়া হয় প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। পরে লাশ আনা হয় গ্রামের বাড়িতে। এই ঘটনায় নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ূন কবীর বাদী হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজি, মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি ওরফে পিয়াস, মাহাথির হাসান, রিফাত, আলী ও ফাহিমসহ অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামি করে শনিবার রাতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২১শে এপ্রিল সোমবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আটককৃতরা হলেন- মো. আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯)।