
ইস্টার সোমবারে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য তিনি ছিলেন এক নির্লোভ, মানবিক ও সংস্কারমুখী নেতার প্রতিচ্ছবি।
ভ্যাটিকান ক্যামেরলেনগো কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজ সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে রোমের বিশপ ফ্রান্সিস স্বর্গীয় পিতার সান্নিধ্যে ফিরে গেছেন। তার পুরো জীবন ছিল প্রভু ও চার্চের সেবায় উৎসর্গিত’।
এদিকে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর পরবর্তী পোপ নির্বাচন করতে ভ্যাটিকানে একত্রিত হবেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মগুরুদের সংগঠন—কলেজ অব কার্ডিনালস।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তারা রোমে আসবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং এক ঐতিহাসিক ও গোপন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। যার নাম কনক্লেভ। এটি লাতিন শব্দ cum clave থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ‘চাবি-সহ’ বা ‘অবরুদ্ধ বৈঠক’।
কীভাবে কাজ করে এই কনক্লেভ?
বিশ্বজুড়ে ৭০টিরও বেশি দেশে ২২০ জনেরও বেশি কার্ডিনাল বা প্রতিনিধি আছেন। তবে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে প্রায় ১২০ জনের। যাদের বয়স ৮০ বছরের নিচে।
উল্লেখ্য যে, গত এক দশকে এই ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশই পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক মনোনীত। ফলে নতুন পোপ নির্বাচনে তার উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শনের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।
রীতিনীতি অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কার্ডিনালরা রোমে জমায়েত হন। সিস্টিন চ্যাপেলে তাদের ডেলিবারেশন বা পরামর্শ পর্ব শুরু হয়। যেখানে মাইকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম তাদের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর ওপর ছায়া ফেলে।
পর্দার আড়ালের গোপনীয়তা
‘Extra omnes’—অর্থাৎ ‘সবাই বেরিয়ে যান’—এই ঘোষণার পর শুধু ভোটার বা কার্ডিনাল ও কিছু কর্মকর্তা ও ডাক্তার ভেতরে থাকেন। এরপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোন, সংবাদপত্র, চিঠিপত্র সবকিছুই নিষিদ্ধ থাকে সেখানে। এমনকি সম্ভাব্য গোয়েন্দা যন্ত্র শনাক্ত করতে চ্যাপেল স্ক্যানও করা হয়।
এই গোটা সময়ে কার্ডিনালরা সেন্ট মার্থা হাউসে অবস্থান করেন—যেখানে পোপ ফ্রান্সিস নিজে ১২ বছর ধরে বাস করতেন। এখান থেকেই তারা প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ভোট দিতে যান সিস্টিন চ্যাপেলে।
ভোটদান ও সাদা ধোঁয়া
প্রক্রিয়ার প্রথমে একটি পবিত্র মেস বা প্রার্থনাসভার মাধ্যমে কনক্লেভ শুরু হয়। এরপর কার্ডিনালরা ব্যালট কার্ডে ‘Eligo in summum pontificem’ (আমি সর্বোচ্চ ধর্মগুরু হিসেবে নির্বাচন করছি) কথাটির নিচে নির্বাচিত ব্যক্তির নাম লিখে ভোট দেন। তবে ব্যালট গোপনীয়ভাবে থাকে।
প্রতিদিন দুইবার করে ভোট হয়। প্রতিবারের ভোট শেষে ব্যালট পুড়িয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। এতে কালো ধোঁয়া মানে ভোটে সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচিত।
৩০টি ব্যালটেও যদি সিদ্ধান্ত না আসে, তখন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কাউকে পোপ ঘোষণা করা হয়।
ভ্যাটিকানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কনক্লেভ ছিল ১৯২২ সালে। তখন পোপ নির্বাচনে সময় লেগেছিল পুরো পাঁচ দিন।
নতুন পোপের অভিষেক
এরপর নির্বাচিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি নির্বাচন গ্রহণ করছেন কিনা। একই সঙ্গে তিনি কোন নাম নিতে চান। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘Room of Tears’-এ। সেখানে তিনি সাদা পোশাক ও লাল স্লিপার পরিধান করেন। সেখানে বিভিন্ন মাপের পোশাক আগে থেকেই তৈরি করে রাখা থাকে।
সবশেষে, কার্ডিনালদের ডিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন—
‘Annuntio vobis gaudium magnum: Habemus papam’ অর্থাৎ ‘আমি তোমাদের মহাসমাচার জানাচ্ছি: আমাদের একজন পোপ আছেন!’) সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান