Image description

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটির ওপর ২ বিলিয়ন ডলার অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ—হার্ভার্ড সরকারের নির্দেশ মানেনি, বিশেষ করে “অ্যান্টিসেমিটিজম” বা ইহুদি বিরোধিতা ঠেকাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে সাড়া দেয়নি।

অবশ্য হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি মূলত একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয় কোন বিষয় পড়াবে, কাকে ভর্তি করবে বা কাকে শিক্ষক নিয়োগ দেবে—এসব বিষয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

বারাক ওবামা বলেন, হার্ভার্ড এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো সরকারের বেআইনি চাপে মাথা নত না করে, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এমন অবস্থান নেবে।

হার্ভার্ডের পাশে দাঁড়ানোর মতো অবস্থান নিয়েছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ৮৭৬ জন অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা সরকারের অন্যায় হুমকির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয় এবং একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করে।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, “আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক গভীর সংকটে আছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আত্মশাসন হুমকির মুখে। এই মুহূর্তে আমাদের একসাথে দাঁড়াতে হবে।”

ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, যারা সরকারের চাহিদা মানবে না তাদের অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে হার্ভার্ড ছাড়াও কোলম্বিয়া, প্রিন্সটন, এমআইটি-র মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও চাপের মুখে পড়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কিছু দাবি মানলেও একাডেমিক স্বাধীনতার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। প্রিন্সটন জানিয়েছে, তারা এখনও কোনো সরকারি দাবি পায়নি। তবে আইন মেনে চলবে। MIT জানিয়েছে, তাদের ৯ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তাদের অনুদান বন্ধ হবে। আমরা কোনোভাবেই এই ঘৃণা সহ্য করব না।”

অনেক শিক্ষাবিদ এবং আইনজীবী বলছেন, এটি আসলে একাডেমিক স্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টা। “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা, শিক্ষাদান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ আইনবিরোধী”—এমনটাই বলেছে ‘প্রোটেক্ট ডেমোক্রেসি’ নামে একটি আইনি সংগঠন।

কোলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের চাপে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন—মুখোশ পরে প্রতিবাদ নিষিদ্ধ, ক্যাম্পাস ভবনের ভেতরে বিক্ষোভ বন্ধ, ইসরায়েল ও ইহুদি স্টাডিজ বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগ।

সমালোচকদের মতে, এসব পদক্ষেপ শুধু অ্যান্টিসেমিটিজম ঠেকানোর নামে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করছে।

ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, “আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থ বন্ধ করব যারা মার্কসবাদ ছড়িয়ে আমাদের আমেরিকান সংস্কৃতি ধ্বংস করছে।”

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, যারা সরকারের অনুদান নেয়, তাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। অন্যথায়, তারা রাজনৈতিক সংগঠনের মতো বিবেচিত হবে এবং ট্যাক্স ছাড় পাবেনা।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—একদিকে সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব, আর অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বাধীনতার লড়াই। হার্ভার্ড, ইয়েল, এমআইটি কিংবা কোলম্বিয়া—তারা কেউই সহজে নতি স্বীকার করছে না। এই টানাপোড়েন আমেরিকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক বাঁক।