
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মাহাবুবুল ইসলাম সপরিবারে তুরস্কে পালিয়েছেন। ৮ মাস ধরে এ কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন। গত বছরের ৩ আগস্ট হঠাৎ কর্মস্থল থেকে পালিয়ে যান মাহবুব। বেশ কয়েকদিন হোয়াটসঅ্যাপে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও এক পর্যায়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান।
অভিযোগ রয়েছে, পতিত স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা ডাকতেন জেলার মাহবুব। গণভবনে ছিল তার অবাধ প্রবেশাধিকার। তার বিরুদ্ধে নিয়োগ, বদলি, তদবির বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন এ দুর্নীতিবাজ। দুদকেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
সূত্র জানায়, ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনা যখন কারান্তরীণ ছিলেন তখন মাহবুবুল ইসলাম সেখানে ডেপুটি জেলার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় শেখ হাসিনাকে সেবাযত্ন ও তথ্য আদান-প্রদান করে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেন। পরে তাকে মা বলে সম্বোধন করতেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি জেলার হিসাবে পদোন্নতি পান। এরপর থেকে কারা অধিদপ্তরে মাহবুব হয়ে উঠেন সর্বেসর্বা। তার আঙুলের ইশারায় সবকিছু হতো কারা অভ্যন্তরে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুদিন আগে সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যান মাহাবুবুল ইসলাম। দীর্ঘ আট মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কারা অধিদপ্তর। এর মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হলেও তার জবাব আসেনি।
কারা সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ১২ মে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হিসাবে যোগ দেন মাহাবুবুল ইসলাম। যোগদানের পর এ কারাগারে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেন। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মাহবুব নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, কারাগারের টেন্ডার বাণিজ্যসহ কারাসংশ্লিষ্ট সব বাণিজ্য করেছেন। এমনকি এসপি ও ডিসির বদলিও করিয়েছেন মাহবুব। শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পেতেন বলে অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে ভয় পেতেন। দুর্নীতি করে নারায়ণগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স বাসভবন ও একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা কারাগারের একজন ডেপুটি জেলার বলেন, গত কয়েক মাস আমরা তার পরিবারের বিভিন্ন জনের মোবাইল নম্বরগুলোতে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কোনো ভাবেই তার ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তিনি তুরস্কে রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি সপরিবারে চলে গেছেন।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্লাহিল আল-আমিন বলেন, জেলার মাহাবুবুল ইসলাম আট মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। শুনেছি তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু জবাব আসেনি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমি কথা বলতে পারব না।