
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাঠানো এক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেন মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী বিশেষ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। এর দুইদিন না পেরতেই উইটকফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। উইটকফ মনে করেন, ইউক্রেনের পূর্বদিকের চারটি অঞ্চলকে নিজেদের মালিকানায় আনতে রাশিয়া যে কৌশল নিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে মস্কককে সমর্থন দেয়াটাই একটি দ্রুততম উপায়। শনিবার (১২ এপ্রিল) দুই মার্কিন কর্মকর্তা এবং ঘটনাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও পাঁচ ব্যক্তি রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত মাসে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব টাকার কার্লসনকে দেওয়া একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে প্রকাশ্যে একই ধরনের অভিমত জানিয়েছিলেন এই মার্কিন দূত। তবে ইউক্রেন বারবারই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ বিষয়ে ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন দূত জেনারেল কিথ কেলোগ ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে উইটকফের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন বিবাদপূর্ণ ভূমিসংক্রান্ত কিছু শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক হলেও রাশিয়ার কাছে একতরফাভাবে অঞ্চলগুলোর সম্পূর্ণ মালিকানা হস্তান্তরে কখনোই রাজি হবে না।
যদিও বৈঠকে মার্কিন কৌশল বদলানোর বিষয়ে ট্রাম্প কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তার সিদ্ধান্ত ছাড়ায় বৈঠকটি শেষ হয়। গতকাল শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে রাশিয়ায় সফর করেন উইটকফ।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে অচলাবস্থা নিরসনে উইটকফের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতবিরোধ ক্রমাগত বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন কেলোগ। তিনি মূলত ইউক্রেনকে আরও বেশি সরাসরি সমর্থন দেয়ার পক্ষে।
এ ব্যাপারে উইটকফের কার্যালয়, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ, পররাষ্ট্র দপ্তর, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাসের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। তবে সাড়া পায়নি সংবাদ মাধ্যমটি।
রয়টার্স বলছে, সাধারণ নিরাপত্তাবিধি ভেঙে রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভকে নিজের ব্যক্তিগত বাসভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মার্কিন দূত উইটকফ। এরপর হোয়াইট হাউসে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
তবে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে উইটকফকে সতর্ক করা হয়। শেষ পর্যন্ত উইটকফের বাড়িতে আর নৈশভোজ না হলেও হোয়াইট হাউসে এর আয়োজন করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয় অর্জনে ট্রাম্পকে সহযোগিতা করেছেন উইটকফ। তিনি ট্রাম্পের অনেক দিনের বন্ধুও। ফলে সংশয়বাদী কিছু রিপাবলিকান সদস্য মনে করছেন ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপকভাবে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
উইটকফের রাশিয়াপন্থী অবস্থানের কারণে মার্কিন কংগ্রেসের কিছু রিপাবলিকান সদস্য এতটাই উদ্বিগ্ন হয়েছেন যে তারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
গত ২৬ মার্চ রিপাবলিকান দলের গুরুত্বপূর্ণ অনুদানকারী এরিক লেভিনের লেখা এক চিঠিতে বলা হয়, ‘উইটকফকে সরতে হবে, তার জায়গায় রুবিওকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ পুতিনের প্রশংসা করায় চিঠিতে উইটকফের সমালোচনাও করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে তিনি ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছেন। পাশাপাশি ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে যেসব শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার অনেকগুলোই ট্রাম্প শিথিল করে দিয়েছেন।
ট্রাম্প বারবারই বলেছেন, তিনি চান মে মাস নাগাদ ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। তবে আংশিকভাবে হওয়া দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থবির হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি না হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতাশা প্রকাশ করেছেন। ফলে উইটকফের মতের দিকে তিনি এগোতে পারেন এমন ধারণা পুরোপুরি ফেলে দেয়ার নয়। কারণ কয়েকটি সূত্র বলেছে, উইটকফ ও ট্রাম্পের মধ্যে এখনো শক্তিশালী ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় আছে।
এ ছাড়া শুক্রবার (১১ এপ্রিল) পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে উইটকফ রাশিয়াও গিয়েছেন এবং ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য আজ শনিবার তার মধ্যপ্রাচ্যে থাকার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল আলোচনায়
গত ২১ মার্চ কার্লসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উইটকফ চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের ধারণা প্রকাশ্যে উত্থাপন করেছিলেন। এ চারটি অঞ্চল হলো লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল সম্পর্কে উইটকফ বলেন, ‘তারা রুশভাষী। সেখানে অনুষ্ঠিত গণভোটে বিপুলসংখ্যক মানুষ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাঁরা রাশিয়ার শাসনাধীন থাকতে চান।’
তার এমন মন্তব্যের পর হতবাক হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের মতে, বিশেষ দূতের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রুশ কর্মকর্তাদের চাওয়ারই প্রতিফলন ঘটেছে। ডেমোক্র্যাটরাও উইটকফের সমালোচনা করেছেন। তবে উইটকফের অনেক সমর্থকও রয়েছেন প্রশাসনের ভেতরে।